মাহমুদ কামাল এনামুল হক

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

মতামত

পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশ একই সঙ্গে উন্নয়নশীল ও জনবহুল দেশ। পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রেখে টেকসই উন্নয়ন দেশের প্রধান লক্ষ্য। টেকসই উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা প্রতিনিয়ত বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যার মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উল্লেখযোগ্য। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ প্লাস্টিক অপচনশীল অবস্থায় দীর্ঘদিন পরিবেশে থেকে যায়। বাংলাদেশে প্লাস্টিকের মাথাপিছু ব্যবহার মাত্র পাঁচ কেজি; যেখানে বিশ্বে গড় প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রায় বিশ কেজি। এই পরিসংখ্যান থেকে আমরা সহজেই প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ নিয়ে কিছুটা ধারণা পাই। বর্তমানে বিশ্বের মোট প্লাস্টিকের মধ্যে ৩০ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে এবং বাকি অংশ তিনটি ধাপে ভাগ করা যায়, এরমধ্যে ৭৯ শতাংশ মাটিতে, ১২ শতাংশ পুড়িয়ে এবং ৯ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। প্লাস্টিক বর্জ্যরে বাকি অংশ দীর্ঘদিন পরিবেশে (মাটি ও পানি) থেকে যায়। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যরে মধ্যে রয়েছে বোতল, চালের বস্তা এবং প্লাস্টিক ব্যাগ। কিন্তু অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশের প্লাস্টিক বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় পরিবেশগত মারাত্মক প্রভাব নিয়ে তা মানবজীবন ও বিভিন্ন প্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত এই প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা জনবহুল শহর হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এক গবেষণায় জানা যায়, ঢাকা শহরে প্রতিদিন মাথাপিছু ৫৬০ গ্রাম বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, এরমধ্যে প্লাস্টিক অন্যতম। তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরে দৈনিক ৭ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সেসঙ্গে দেশের ৩২৪টি পৌরসভা ও ১১টি সিটি করপোরেশনেও বর্জ্য উৎপাদনের হার বেড়েই চলছে। দেশের শহরগুলোতে যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে এবং কত ধরনের বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, তার সঠিক ও বিস্তারিত গবেষণা তথ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। সেসঙ্গে আর্থিক ও ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা ঘাটতি থাকায় শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করাও জটিল হয়ে উঠছে।

এ ছাড়াও প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যগুলো পানির সঙ্গে মিশে এর গুণাগুণ নষ্টের সঙ্গে সঙ্গে পানিতে থাকা জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নদী ও সাগরে প্লাস্টিক ও পলিথিনের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বর্তমান সময়ে সমুদ্রের সম্পদ নিয়ে যে বিস্তর গবেষণা চলছে, প্লাস্টিক বর্জ্য এর জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে। ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে, প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন টন বর্জ্য প্লাস্টিক সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় এবং যা প্রায় ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। সমুদ্রে যে হারে প্লাস্টিক বাড়ছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রবাল প্রাচীরের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বৃদ্ধির পর দ্বিতীয় বড় হুমকিটি প্লাস্টিক বর্জ্য; যা প্রবাল প্রাচীরের রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২০ গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাছাড়া ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে প্লাস্টিক অন্যতম। মাটির স্তরে স্তরে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য বৃদ্ধির ফলে ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলো সঠিকভাবে পরিপূর্ণ হচ্ছে না। অপরদিকে পানির চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, প্লাস্টিক বর্জ্যরে এ ধরনের ব্যবস্থাপনা ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। উৎপাদিত বর্জ্যগুলো শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ, পরিবহন ও অপসারণের পর জায়গা হয় ল্যান্ডফিল সাইটে (খধহফভরষষ ংরঃব)। স্তূপাকারে জমা করা বর্জ্যরে জন্য যে জায়গা ব্যবহার করা হয়, তার ধারণক্ষমতা দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ল্যান্ডফিল করার জন্য অবশ্যই কিছু নিয়ম মানা জরুরি। এনভায়রমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) এ বিষয়ে বেশ কিছু নীতিমালা উল্লেখ করেছে। ১৯৯১ সালের এই নীতিমালা অনুযায়ী ল্যান্ডফিল সাইটের ৩০ মিটারের মধ্যে কোনো জলাশয় থাকবে না, ১৬০ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো খাবার পানির নলকূপ থাকতে পারবে না এবং ৬৫ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো ঘরবাড়ি, স্কুল বা পার্ক থাকতে পারবে না। তাই ল্যান্ডফিলটি অত্যন্ত অপব্যয়ী হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে জায়গা প্রয়োজন হয় এবং রাসায়নিক উপাদান ও প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা শক্তি নষ্ট হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও উন্নয়নশীল কাঠামো গড়ে ওঠায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ল্যান্ডফিল সাইটের জায়গা বৃদ্ধি করা সহজ নয়। যেসব স্থানে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ল্যান্ডফিল তৈরি করা হয়, পরবর্তীকালে এর ফলে ভূমিগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না এবং সেখানে প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলো সহজেই জলপথে বয়ে যেতে পারে বা বন্যার পানিতে সমুদ্রের দিকে নিয়ে যেতে পারে। প্লাস্টিক বর্জ্যরে বেশির ভাগই যেহেতু মাটিতে থেকে যাচ্ছে, তাই এগুলো মাটি ও পানির গুণগত মান নষ্ট করছে। তাছাড়া প্লাস্টিকগুলো ল্যান্ডফিলে ক্ষয় হয়ে গেলে তারা মাটি এবং আশপাশের পরিবেশ দূষণকারী (ফ্যাথলেট এবং বিসফেনল) পদার্থ মুক্ত করতে পারে।

প্লাস্টিক সাধারণত পেট্রোলিয়াম বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উদ্ভূত হয়, এই প্লাস্টিক বর্জ্যে যে পরিমাণে সঞ্চিত শক্তি রয়েছে, তা অন্য কোনো বর্জ্যরে তুলনায় বেশি পরিমাণে সঞ্চিত শক্তি দেয়। প্লাস্টিকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে কিছু শক্তি ফিরে আসে। প্রকৃতপক্ষে, এক পাউন্ড প্লাস্টিক থেকে যে পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করা যায়; তা প্রায় ইয়মিং কয়লা এবং জ্বালানি তেল থেকে উৎপাদিত শক্তির সমান। তাই প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরি, উল্লেখযোগ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি। কিন্তু প্লাস্টিক জ্বালানি প্রক্রিয়াতে বায়ুমন্ডলে বিপজ্জনক পদার্থগুলো নির্গত হতে পারে; যার ফলে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করবে। উদাহরণস্বরূপ, পিভিসি এবং হ্যালোজেনেটেড অ্যাডিটিভ প্লাস্টিক বর্জ্যরে সঙ্গে বিপজ্জনক পদার্থগুলো মিশ্রিত থাকে এবং তাদের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে পরিবেশে ডাই-অক্সিন এবং পলিক্লোরিনেটেড-বাইফেনিয়াল মুক্ত করে দেয়। তাই প্লাস্টিক বর্জ্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে বাছাই করা জরুরি এবং বিজ্ঞানসম্মত প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরি করে যে তাপ উৎপন্ন হয়, তা দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। যদি এই প্রকল্পটি সারা দেশের পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোতে করা হয়; তাহলে বর্জ্য অনেকাংশে কমে যাবে। এর ফলে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন করে দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এ ছাড়াও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বর্জ্যরে কিছু অংশ পুড়িয়ে ফেলা যেতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্জ্য পুড়িয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে ফেলা সম্ভব। কিন্তু এই প্রক্রিয়া অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে হতে হবে।

অনেক প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করা যায় এবং উদ্ধার করা উপকরণগুলোকে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তবে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অসুবিধার কারণে এই পদ্ধতিটি পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেসঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করায় অনেক বর্জ্য কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৬,৩৩,১২৯ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, এর ৫১ শতাংশ পুনঃব্যবহার করা হচ্ছে; যার পরিমাণ ৩, ২৩,০০০ টন। বাংলাদেশে প্রায় দুই হাজার শিল্প-কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ৫০-৬০টি সরাসরি প্লাস্টিক টুকরা বিদেশে রফতানি করছে। তাছাড়াও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে বিভিন্ন ধরনের খেলনা তৈরি করা হচ্ছে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ওপর ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ছাড়ের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা যেতে পারে; যা প্লাস্টিক রিসাইকেল শিল্পে বিনিয়োগ করার জন্য ভূমিকা রাখবে।

প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে, এটি এমন প্লাস্টিক; যা জীবের ক্রিয়া দ্বারা পচে যায়। বিশেষত যেসব প্যাকেজিং জৈব বর্জ্য থেকে সহজে প্রথক করা যায় না, সেখানে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যবহার করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকগুলো জীব দ্বারা কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং জলের মধ্যে সম্পূর্ণ বিপাক হতে পারে, কিন্তু অক্সো-বায়োাডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকগুলো পরিবেশে ধাতু ছেড়ে দিতে পারে।

প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যে বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করে সংরক্ষণ অন্যতম। প্রাথমিক স্তর থেকে বর্জ্য আলাদা করা নিয়ে একটি নীতিমালা করা হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিরোধ করতে সরকারের সঙ্গে প্রতিস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি। সেসঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো সম্পদে রূপান্তর করার প্রকল্প হাতে নিতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশে এখনো প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তেমন কোনো আইন নেই। তাই দেশের পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অবশ্যই আইন প্রণয়ন করে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সঠিক নিয়মে বর্জ্য সংগ্রহের হার বৃদ্ধি, উপযোগী ও উন্নত বর্জ্য পরিবহন পদ্ধতি এবং জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি সৃষ্টি না হয়Ñ এমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি কাজে লাগানো। এ ছাড়া দেশের পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর ও টেকসই করতে পারলে তা অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে; সেসঙ্গে আমরা পাব একটি পরিচ্ছন্ন দেশ। টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান সুবিধা হলো পরিবেশের ওপর প্রভাব কমিয়ে বায়ু এবং পানির গুণগত মানের উন্নতি করে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে অবদান রাখে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে এবং পরিবেশ রক্ষায় টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close