reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ জানুয়ারি, ২০২০

নদীপথ সচল রাখতে চাই যথাযথ পদক্ষেপ

নদীমাতৃক এই বাংলাদেশ অনেকটাই নদীপথ পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। একসময় তো ছিল নদীপথই পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। তবে এখন নতুন অনেক সড়ক ও রেলপথ এবং ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ হওয়ায় নদীপথের গুরুত্ব আগের মতো নেই। তার পরও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ এখনো নদীপথের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। জন ও পণ্য পরিবহনে নদীপথ এখনো বেশ সাশ্রয়ী। সে কারণে স্থলপথের পাশাপাশি নদীপথকেও সব সময় উপযোগী রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা-বরিশাল নদীপথে বেশ কটি ডুবোচর জেগে উঠেছে। এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে নদীপথে যাতায়াত। ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে ভাটার সময় সেসব ডুবোচর জেগে ওঠে। ফলে মিয়ার চ্যানেল দিয়ে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শীত মৌসুমে নদীর পানি কম থাকায় এ সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। নদীপথ বিষয়ে অভিজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন, অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে জেগেছে ডুবোচর। তারা বলছেন, ড্রেজিংয়ে করে উত্তোলিত বালু আবার নদীতেই ফেলার কারণে এ সংকটের সমাধান হচ্ছে না। জোয়ারের ওপর নির্ভর করে নৌযান চলাচল করায় সময় ও অর্থ দুটিই বেড়েছে যান চলাচল কর্তৃপক্ষের। ভারী জাহাজ ভাটার সময় স্থবির হয়ে থাকে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। জোয়ারের জন্য অন্তত দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় নৌযানগুলোকে। বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে বরিশাল নদীবন্দর থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত অন্তত পাঁচ-ছয়টি পয়েন্ট নাব্য সংকটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নাব্য সংকটের কারণে দুই মাস ধরে ওই চ্যানেল হয়ে লঞ্চ চলাচল করছে না। এ কারণে বিআইডব্লিউটিএর নির্ধারিত চ্যানেল মেঘনার উলানীয়া-কালীগঞ্জ হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় বেশি লাগার পাশাপাশি অন্তত তিন ব্যারেল তেলও বেশি লাগছে। বর্তমান চ্যানেলেও নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি জোয়ারের সময়ও নাব্য সংকট থাকে। চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেলে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের লঞ্চগুলোকে চলাচল করতে হবে ভোলার ইলিশা হয়ে। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে আরো বেশি সময় লাগবে। বাড়বে জ্বালানি খরচও।

নাব্য সংকট সৃষ্টির জন্য বিআইডব্লিউটিএর অপরিকল্পিত ডেজিং ব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন লঞ্চমালিকরা। তাদের মতে, বিআইডব্লিউটিএর উদ্যোগে নদীর অনেক জায়গায়ই ড্রেজিং করা হয়েছে, কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেসব জায়গা ও চ্যানেলে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। লঞ্চচালক বা মাস্টারদের মতে, এবার উত্তরাঞ্চলে সৃষ্ট বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে নদীর পানির সঙ্গে পলির পরিমাণ বেড়ে যায়। আর পলিযুক্ত পানির স্রোতোধারা নদীর তলদেশে যেসব স্থানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেখানেই ডুবোচরের সৃষ্টি হচ্ছে। ওইসব স্থানে নাব্য সংকট দেখা দিচ্ছে। নৌযান আর ড্রেজিং বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ড্রেজিংয়ের বালু নদীতে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কেননা, যে পরিমাণ বালু কাটা হয়, তা স্থলে ফেলার মতো জায়গা নেই। তবে পুরো ব্যাপারটিকে বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা করলে ড্রেজিংয়ের ভাবনাটিকে অন্যভাবে বিবেচনায় আনা যায়। সে ক্ষেত্রে ড্রেজিংয়ের বালু নদীতে না ফেলে বিকল্প পন্থায় বিক্রির ব্যবস্থা করলে অর্থবহ হতে পারে ড্রেজিংয়ের লক্ষ্য। ডুবোচরের সমস্যা থেকে রক্ষা পাবে নদীপথ। তাই নদী ড্রেজিংয়ের ফলকে অর্থবহ করতে যথাযথ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close