reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি, ২০২০

একটু সহানুভূতি কি পেতে পারে না গ্রাম আমতৈল

কথায় আছে, জ্বলন্ত প্রদীপের পাদপীঠেই অন্ধকার। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের দিকে তাকালেই প্রদীপের পাদপীঠের কথাই মনে করিয়ে দেয়। এখানকার মোট জনসংখ্যা ৫ হাজার ৫০০। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ঘনবসতিপূর্ণ এ গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩০০ মানুষ প্রতিবন্ধী, যার সিংহভাগই আবার শিশু। অথচ সিলেটের সবচেয়ে প্রবাসীবহুল উপজেলা এই বিশ্বনাথ। যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা অসংখ্য প্রাসাদসম অট্টালিকা আর বাড়ির সামনে কারুকার্যময় তোরণ জানান দেয় বিশ্বনাথের ঐশ্বর্য। কিন্তু এ উপজেলারই আশ্চর্য রকমের ব্যতিক্রম গ্রাম আমতৈল; যা এখন স্থানীয়দের কাছে প্রতিবন্ধীদের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

গবেষণা তথ্য বলছে, এটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম। পরিবেশ খুবই অস্বাস্থ্যকর। দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, মাতৃকালীন স্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে এখানকার অনেক শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নিচ্ছে। কেউবা আবার জন্মের পর বিভিন্ন অসুখে ভুগে প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ দারিদ্র্যই এসবের মূল কারণ। কিন্তু প্রকৃত কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, সমাজের অমানবিক অবহেলার কারণেই গ্রামটি আজ প্রতিবন্ধী গ্রাম নামে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রথমেই বলা হয়েছে, সিলেটের সবচেয়ে প্রবাসীবহুল এবং সম্পদের প্রাচুর্য নিয়ে গড়ে উঠেছে উপজেলা বিশ্বনাথ। এই উপজেলারই একটি গ্রাম আমতৈল। অর্থনৈতিক বিবেচনায় এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য আকাশ আর পাতালের ব্যবধানের মতো। একটি হচ্ছে প্রজ্বলিত প্রদীপ আর অপরটি প্রদীপের পাদপীঠ। এ ক্ষেত্রে না বললেই নয় যে, প্রজ্বলিত প্রদীপ বাহ্যিকভাবে আলোকময় হলেও ভেতরের সবটুকুই অন্ধকারাচ্ছন্ন। আর সে কারণেই পাশের একটি ছোট্ট গ্রামে আলো জ্বলতে পারেনি। তবে বিপরীত একটি তথ্য মতে, এ গ্রামের প্রায় সবাই একে অন্যের আত্মীয়কে বিয়ে করছেন। বংশগত কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।

তথ্যটির সত্যতা আছে। তবে ওই একটি কারণই মুখ্য বা একমাত্র কারণ নয়। অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের নির্মম কশাঘাতে জর্জরিত এ গ্রামের সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ আজ শেকলবন্দি। সেই শেকল ভেঙে যেখানে জ্ঞানের বিন্দুমাত্র আলো পৌঁছাতে পারেনি। এ আলো পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব এবং তাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব ছিল সরকারের। এ কথাও অসত্য নয়। তবে তাদের প্রতিবেশীদের দায়িত্বও কম নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, প্রতিবেশীদের বাহ্যিক প্রাচুর্যের কোনো সীমা-পরিসীমা না থাকলেও মানবিক প্রাচুর্যে রয়েছে যথেষ্ট ঘাটতি। আমতৈল গ্রামকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য বিশ্বনাথ উপজেলার কয়েকজন এগিয়ে এলেই গ্রামটিকে আলোকিত করা সম্ভব। আমরা কোনো ভিক্ষা দেওয়ার কথা বলছি না। তাদের কাজের মধ্য দিয়ে সচ্ছল হওয়ার সুযোগ তৈরি করার কথা বলছি। সুযোগ পেলে তারাও দারিদ্র্যের মহা-অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এবং একই সঙ্গে প্রতিবন্ধীর আগ্রাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম হতে পারে।

আমরা মনে করি, এক গ্রামে এতসংখ্যক প্রতিবন্ধী থাকা খুবই আশঙ্কাজনক খবর। কোনো মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ এই সংবাদে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। তাই জনপদের এই মহা-দুর্যোগের সময় প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসবেন- এটাই প্রত্যাশা। একই সঙ্গে সরকারকেও এ ব্যাপারে তৎপর হওয়ার আহ্বান রইল। আমরা প্রদীপের পাদপীঠে আর সেই অন্ধকার দেখতে চাই না; যা আমাদের অমানবিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়েই তৈরি হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close