reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ জানুয়ারি, ২০২০

নারীর অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ। গুরুত্ব বিবেচনায় সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রয়োজন তাদের জন্য সেই কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা। যাতে তাদের জীবন নিরুপদ্রব ও নির্বিঘœ হয়। গত ১০ বছরে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে সমাজের সবস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ফলে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অবদান অনেক বেশি দৃশ্যমান। বড় উদাহরণ শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের শতভাগ উপস্থিতি। বিশ্বে পোশাকশিল্পে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি তার সিংহভাগ কৃতিত্ব নারীদের। স্বাস্থ্য খাতে নারীর অংশগ্রহণ এখন অর্ধেকেরও বেশি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের ৮০ শতাংশই নারী, যারা নানা রকম ক্ষুদ্র্র উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত। সে বাস্তবতায় বলা যায়, বাংলাদেশের নারীরা দেশের প্রচলিত সংস্কৃতিকে বদলে দিতে সক্ষম হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও বাংলাদেশের নারীদের অগ্রগতির স্বীকৃতি মিলেছে; যা নিঃসন্দেহে এক গৌরবের। বিশ্বের নির্ধারিত ৬৪ দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই প্রতি ঘণ্টায় পুরুষের চেয়ে নারীর মজুরি বেশি। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘণ্টা হিসেবে একই কাজে পুরুষের তুলনায় বাংলাদেশের নারী ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি পারিশ্রমিক পান, যা বিশ্বের অনেক উচ্চ আয়ের দেশের চেয়েও বেশি। প্রতিবেদনটিতে ৬৪ দেশে নারী-পুরুষের মাসিক ও প্রতি ঘণ্টার আয়ের পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বিশ্ব পারিশ্রমিক প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়েও বলা হয়েছে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে পাঁচ নম্বরেই রয়েছে লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন। সেক্ষেত্রে মাত্র এক বছরেই বাংলাদেশ যে উন্নতি করেছে, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের পক্ষেও তা সম্ভব হয়নি। জাতিসংঘের ওই জরিপে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ছাড়াও নির্বাচিত ছিল দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। তবে সেখানে জায়গা হয়নি ভারতের। শ্রীলঙ্কায় লিঙ্গভিত্তিক পারিশ্রমিক ব্যবধান বেশ চড়া, সেক্ষেত্রে নেপালের অবস্থান যথেষ্ট ভালো। তবে একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ ব্যবধান বিশ্বের গড় ব্যবধানের চেয়ে বেশি। আমরা সবাই জানি, স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান নারীকে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার দিয়েছে। সংবিধানের এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন স্কীকৃত এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতেও নারীর অবদান বাড়ছে। বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে কর্মসংস্থানে নারীদের মজুরি বৈষম্য কমে আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন। বিদেশে কর্মসংস্থানে বাংলাদেশের নারীদের সংখ্যা গত এক দশকে ১০ গুণ বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় নারীর অধিকার ও উন্নয়নবিরোধী সব প্রতিবন্ধকতাকে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। আমরা আশা করি, সরকার সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবে। নারী উন্নয়নে প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close