reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

বিশ্ববাসীর চোখ এখন বিশ্ব আদালতের দিকে

গতকাল আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলার অং সান সু চিকে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নৃশংস গণহত্যার দায়ে আদালতের কাঠগড়ায় তার এই উপস্থিতি। সময়ের ধাপে ধাপে অনেক কিছুই বদলে যায়। পরিবর্তন ঘটেছে সু চির চরিত্রেও। গণহত্যার দায়ে দাঁড়াতে হয়েছে আদালতের কাঠগড়ায়। একসময় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এক মহান ব্যক্তিত্বকে আজ গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে দাঁড়াতে হচ্ছে। কেননা, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক কালে নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, তাকে নীরব সমর্থন দিয়ে তিনি তার পুরোনো চরিত্রকে বিসর্জন দিয়ে গণহত্যার এক প্রতিভূ হিসেবে নতুন পোশাকে আবির্ভূত হয়েছেন। আজ তিনি আর শান্তির পক্ষে নেই। বিপক্ষেই তার অবস্থান।

গত ১১ নভেম্বর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলাটি করে। গণহত্যার অভিযোগের পাশাপাশি গাম্বিয়া আদালতের কাছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য কিছু অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করে। সেই গণহত্যার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুনানি শুরু হয়েছে। চলবে তিন দিন। মিডিয়ার ভাষ্যমতে, ১৪ সদস্যের বিচারক প্যানেলের সামনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সু চি কী বলবেন; সেদিকেই তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। এ নিয়ে কৌতূহলেরও শেষ নেই। তবে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই পরিষ্কার হচ্ছে তার অবস্থান। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছর মিয়ানমারে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ সময় দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করা তার জন্য বেশ কঠিন। তবে তার জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ অপেক্ষা করছে। সত্যের পক্ষে দাঁড়ালে তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক বিব্রতকর অবস্থায় পড়বেন একথা সত্য, তবে সত্যের পক্ষে আরো একটি সত্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যে সত্যটি হলো, বিশ্বদরবারে মানবতার পক্ষে তিনি আবার ফিরে পেতে পারেন তার হারানো গৌরব।

সম্ভবত সে পথে যাবেন না অং সান সু চি। হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে সু চি সেনাদের পক্ষেই ওকালতি করবেন বলে মিয়ানমারের স্থানীয় মিডিয়া আগাম বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ভাবনাটাও অনেকটা এ রকম। তবে গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে মিয়ানমারে গণহত্যার যেসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হবে, তাকে খন্ডন করার ক্ষমতা মিয়ানমারের নেই। মিয়ানমারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে বাঁচার জন্য যে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা দেশত্যাগ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা প্রত্যেকেই এক একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এদের কাছ থেকে নৃশংসতার যে কাহিনি বিশ্ববাসী শুনেছে, তা নিশ্চিত গণহত্যার শামিল। শুনানিতে গাম্বিয়ার দাবিকে জোরালো করতে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এই মামলার শুনানিতে এই তিন দেশের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। আর সে কারণেই দেশ তিনটি নেপথ্যে থেকে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা দেবে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত সামরিক অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। সামরিক বাহিনীর জ্বালাও-পোড়াও, খুন, ধর্ষণের মুখে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনী গণহত্যার অভিপ্রায়ে এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে মন্তব্য জাতিসংঘের। আমরা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত শুনানি শেষে যে রায় দেবেন, তা রাখাইন প্রদেশের নিপীড়িত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জমে থাকা ক্ষতের দাগ বিলীন হতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। পরিশেষে বলতে হয়, আমরা ন্যায়বিচার চাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close