এহসান বিন মুজাহির

  ২৩ নভেম্বর, ২০১৯

মুক্তমত

গুজব ছড়ানো গুরুতর অপরাধ

বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ ও এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অর্থনীতি, গ্রামীণ ও নগর কৃষিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে মানুষ সুফল পাচ্ছে ঠিকই; তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সহজলভ্য হওয়ায় প্রতিনিয়ত এসবের মাধ্যমে গুজব রটানো হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে গুজবনির্ভর কিছু ঘটনায় সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টসহ মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একটি মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটানো শুধু ব্যক্তি বা সামাজিক বন্ধনের জন্য হুমকি নয়, বরং একটি জাতি বা রাষ্ট্রের সম্প্রীতি ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।

ভিত্তিহীন কোনো সংবাদ প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা ইসলামে গুরুতর অপরাধ। কোনো সংবাদ পাওয়া মাত্রই যাচাই না করে তা প্রচার করা ইসলামে নিষেধ। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে কোনো সংবাদ পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে প্রচার করা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সব শোনা কথা প্রচার ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (আবু দাউদ , হাদিস : ৪৯৯২)। ইসলাম কোনো অবস্থায়ই গুজব ছড়ানোকে সমর্থন করে না। ইসলামের শিক্ষা হলো, মানুষ সর্বতোভাবেই তা পরিহার করবে। বরং প্রয়োজন ব্যতীত কোনো কথা সে বলবে না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে চুপ থাকে, সে মুক্তি পায়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০১)।

গুজব এবং অপপ্রচার সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক-সচেতনতা অবলম্বন করার তাগিদ দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, হে ইমানদারগণ! তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা তা যাচাই করে দেখবে, যেন অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত না করে এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। (সুরা হুজুরাত : ৬)। পবিত্র কোরআনুল কারিমে আরো এরশাদ হয়েছে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ও না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও হƒদয়Ñ এদের প্রতিটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুরা বনি ইসরাইল : ৩৬)। নেতিবাচক সংবাদের যদি কোনো ভিত্তি থেকে থাকে, তা প্রচার করলে গিবত বা পরনিন্দা বিবেচিত হবে। ইসলামে গিবতকে জঘন্যতম অপরাধ বলে বিবেচিত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা পরস্পরের দোষচর্চা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা অপছন্দ করবে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সুরা হুজুরাত : ১২)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেনে, ‘শয়তান মানুষের রূপ ধরে তাদের কাছে আসে এবং তাদের মিথ্যা কথা শোনায়। অতঃপর লোকজন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের কেউ বলে, আমি এমন এক ব্যক্তিকে এ কথা বলতে শুনেছি, যার চেহারা চিনি, কিন্তু নাম জানি না। (মুসলিম : ২৪১৬)। বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করাকে কোরআনে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তারা তোমাদের সঙ্গে বের হতো, তবে শুধু বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি পেত। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তারা তোমাদের ভেতর ছোটাছুটি করত। তোমাদের ভেতর তাদের কথা শোনার (বিশ্বাস করার) লোক রয়েছে। আল্লাহ অত্যাচারীদের সম্পর্কে অবগত আছেন। (সুরা তাওবা : ৪৭)। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষের মধ্যে গুজব প্রচারই হলো ভয়ংকরতম মিথ্যা। (মুসলিম : ১৯৭২)।

সামাজিক মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মুসলিম সমাজের উচিত তাতে আক্রান্ত না হওয়া। তা প্রচারে সহযোগিতা না করা। বরং যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে তা সমাধানের চেষ্টা করা। পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের কাছে নিরাপত্তা বা ভয়ের কোনো সংবাদ পৌঁছে, তখন তারা তা প্রচার করে। যদি তারা তা (সংবাদটি) রাসুল বা তাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তির দৃষ্টিগোচর করত, তবে তাদের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অনুসন্ধানকারীরা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকত, তবে সামান্যসংখ্যক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করত। (সুরা নিসা : ৮৩)। কোরআন-হাদিস থেকে জানা গেল অপপ্রচার এবং গুজব ছড়ানো ইসলামী শরিয়তে যেভাবে গুরুতর অপরাধ; তেমনি রাষ্ট্রীয় আইনেও অপরাধ। কাজেই কোনো সংবাদে সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে, তা প্রচার থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close