reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ নভেম্বর, ২০১৯

নিয়ন্ত্রণহীনতা রুখতেই হবে

বাজার অস্থির হয় চাহিদা ও জোগান ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে। এ তত্ত্ব বিশ্বের সব দেশের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। একমাত্র বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম। স্বাভাবিক নিয়ম বা কারণে এখানে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে না। এখানে কৃত্রিম উপায়ে ভারসাম্যহীন করা হয় বাজারকে। বিষয়টি অস্বাভাবিক কোনো কারণে ঘটেনি। কারণটিও স্বাভাবিক। কেননা, পুঁজির চরিত্র অনুযায়ী গড়ে উঠেছে বাজারের চরিত্র। নতুন করে কোনো রাষ্ট্রের জন্ম হলে, প্রথমদিকে যে পুঁজির জন্ম হয়; সেখানে আধিপত্য থাকে লুটেরা পুঁজির। বিশেষ করে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র কাঠামোয় গড়ে ওঠা রাষ্ট্রে। সেই পুঁজির চরিত্র হয় লুটেরা চরিত্র। কালক্রমে এই পুঁজির চরিত্রকে জাতীয় পুঁজির চরিত্রে রূপান্তর ঘটাতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যাদের এ পুঁজির চরিত্রকে জাতীয় পুঁজির চরিত্রে রূপান্তর ঘটানোর কথা, তারা তা করেননি। অথবা বলা যায়, তারা তা ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর সে দায় ৪৭ বছর পরে এসেও লুটেরা পুঁজির দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সমাজের প্রতি ইঞ্চি ভূমিতে আজ লুটেরাদের নখের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত এবং রক্তাক্ত। মানুষ আজ কতিপয় মানুষের ক্ষমতার দাপটের কাছে পরাভূত। প্রশাসনের কাছ থেকেও শুনতে হচ্ছে, ‘সিন্ডিকেট নামধারী সদস্যদের ক্ষমতা অনেক’। শক্তির ভারসাম্যে তারাই চালিকাশক্তি।

বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই চালিকাশক্তির ভূমিকা যত দিন সিন্ডিকেটের হাতে কুক্ষিগত হয়ে থাকবে, তত দিন বাজারের এই অস্থিরতাকে থামানো সম্ভব নয়। ভূমিকায় আসতে হবে সরকারকে। যদিও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট আইন আছে। কোনো পণ্য কত দিন মজুদ করা যাবে, সে বিধানও রয়েছে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়, কিন্তু কোনো কিছুতেই ফলাফল সাধারণ মানুষের পক্ষে যায় না। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের সব কর্মকান্ডই আপৎকালীন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। আপৎকালীন এই কর্মকান্ড দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সরকারকে শেকড়ে হাত দিতে হবে। অর্থাৎ পুরো বছরের জন্য আগাম পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের পণ্যবাজারের অস্থিরতাকে থামানো সম্ভব হবে না। কেননা, চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করছে ব্যবসায়ীদের (আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ী) অপব্যবসাসুলভ আচরণ। কখনো নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে, কখনো রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার সুবিধা গ্রহণ করে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করছেন।

এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন সাধারণত কুষ্টিয়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুরের ১২-১৫ জন বড় চালকল মালিক। ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামভিত্তিক পাঁচ-সাতটি পরিশোধন কারখানা। একই এলাকার ৮-১০টি পরিশোধন কারখানা নিয়ন্ত্রণ করে চিনির বাজার। আর মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রধান ভূমিকা রাখেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। এভাবেই এক একটি পণ্য কতিপয় ব্যবসায়ীর অনৈতিক ব্যবসার জালে আটকে রেখে প্রতিনিয়ত বাজারকে অস্থির করে তোলা হচ্ছে। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীদের এই অনৈতিক লুটেরাসুলভ আচরণকে প্রতিহত করতে কাউন্টার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। যারা বাজারের চাহিদা এবং জোগানের ভারসাম্যহীনতার সমন্বয় ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আর এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি হিসেবে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে সরকারকে দেশজুড়ে একটি চেইনশপ গড়ে তোলার পরিকল্পনার দিকে ধাবিত হতে হবে। যদি তা করা যায়, তাহলে একদিকে অসংখ্য বেকারের চাকরির সংস্থান হবে। পাশাপাশি সরকারও বিপুল লাভের সাক্ষাৎ পেতে পারে। পরিশেষে বলব, আমরা এ সমস্যা এবং সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান চাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close