প্রকৌশলী রিপন কুমার দাস

  ২১ নভেম্বর, ২০১৯

মুক্তমত

নিবন্ধন হোক ক্যাটাগরি ভিত্তিতে

বর্তমান সভ্যতাকে বলা হয় ইন্টারনেট সভ্যতা। সভ্যতার এই যাত্রাকে আমরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বলে চিহ্নিত করছি। ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে একটি শিক্ষিত, দারিদ্র্যমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও ইন্টারনেট এখন আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখন মানুষের জীবনযাপন, তথ্য আদান-প্রদান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সরকার পরিচালনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও পারস্পরিক সম্পর্কের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ইন্টারনেট। লেখা, চিত্র, শব্দ ও ইন্টার একটি ভিটি সহযোগে ইন্টারনেটে তথ্য ও উপাত্তকে এমনভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব; যা আর অন্য কোনো মাধ্যমেই তেমনটা সম্ভব নয়। এটি একদিকে হতে পারে খবরের কাগজ, ব্যক্তিগত ডায়েরি বা সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। অন্যদিকে ইন্টার একটিভিটিসহ বিভিন্ন ধরনের নিউজ পোর্টাল, নিউজ ব্লগ ইত্যাদি নানা ধারণের অনলাইন গণমাধ্যমের আবির্ভাব।

দেশের বিদ্যমান কাগজ ও সম্প্রচারনির্ভর জাতীয় গণমাধ্যমগুলোও তথ্য-উপাত্ত ও সম্প্রচার ইন্টারনেটে প্রকাশ করছে। ফলে ইতোমধ্যে অনলাইন গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশে অনলাইন গণমাধ্যমের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এর সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি হবে। তাই অনলাইনে প্রকাশিত গণমাধ্যমের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা আবশ্যক। বিদ্যমান অবস্থায় এসব গণমাধ্যম একদিকে কোনো স্বীকৃৃত বা সুযোগ-সুবিধা পায় না, অন্যদিকে গণমাধ্যমের জাতীয় মান রক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আইনকানুন, নিয়মনীতি, নিবন্ধন ইত্যাদি বিদ্যমান ছিল না। অনলাইন গণমাধ্যমের স্বীকৃতি মান নিশ্চিতকরণ ও নীতিনৈতিকতা গড়ে তোলা এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের জন্য একটি জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালার উদ্দেশ্য হলো, অনলাইন গণমাধ্যমের সহায়তায় বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, রফতানি বৃদ্ধি, সরকারি সেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন ইত্যাদি কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

তথ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮ হাজার অনলাইন পত্রিকা নিবন্ধনের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রকাশকরা। এসব কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই চলছে। তবে যদি কোনো প্রকাশক তার অনলাইন পত্রিকার কাগজপত্র ভুলে কম দিয়ে থাকেন; তাহলে তথ্য অধিদফতর বিষয়টি অবগত করবে এবং ভুল করে না দেওয়া কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য বলা হবে। যাচাই-বাছাই এবং সংশোধন শেষে সংশ্লিষ্ট অনলাইন পত্রিকা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার জন্য পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে (এসবি) দায়িত্ব দেবে তথ্য অধিদফতর। এসবি ওই পত্রিকা সম্পর্কে তথ্য অধিদফতরকে প্রতিবেদন দেবে। এসবির প্রতিবেদন শেষে ওই পত্রিকা যদি নিবন্ধিত হওয়ার যোগ্য হয়, তাহলে নিবন্ধিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব অনলাইন পত্রিকার অফিস নেই এবং সাংবাদিক নেই; তাদের নিবন্ধন দেবে না তথ্য অধিদফতর। বর্তমানে দেশে অনলাইন পত্রিকার সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও নিবন্ধনের মাধ্যমে অনেকটাই পরিষ্কার হওয়া যাবে, সে সংখ্যা সম্পর্কে। এ ছাড়া যারা নিবন্ধিত হবেন, তারা সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আর নিবন্ধনের মাধ্যমে সরকারিভাবে একটি স্বীকৃতিও পাওয়া যাবে। এতে করে অনলাইন পত্রিকাগুলোরই লাভ। এ নিবন্ধন করার ফলে সরকারি বিজ্ঞাপনের সুযোগ পেতে পারে অনলাইন পত্রিকাগুলো। এ ছাড়া যাদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নেই, আবেদন করলে তারা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাবে। সেক্ষেত্রে কোন পত্রিকা কটা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাবে, তা ওই পত্রিকার অ্যালেক্সা রেটিং, গুগল অ্যানালিটিকস, নিজস্ব কনটেন্টের পরিমাণ ও সাংবাদিকের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলেও জানা যায়।

সব অনলাইল নিউজ পোর্টাল কি একই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করবে, নাকি এক একটি পোর্টাল এক এক ধরনের সংবাদ প্রকাশ করবে। তার ওপর ভিত্তি করে অনলাইল নিউজ পোর্টালসমূহের নিবন্ধনকে চার ক্যাটাগরিতে ভাগ করা জরুরি। ক্যাটাগরি-১ : জাতীয়, ক্যাটাগরি-২ : আঞ্চলিক, ক্যাটাগরি-৩ : স্থানীয়, ক্যাটাগরি-৪ : কমিউনিটি ভিত্তিক। ক্যাটাগরি-১ জাতীয় বলতে জাতীয় স্থানীয় সব ধরনের সংবাদ পরিবেশন করার সুযোগ থাকবে। সমগ্র দেশে ও বিদেশে সাংবাদিক নিয়োগ করার অধিকার তাদের থাকবে। ক্যাটাগরি-২ আঞ্চলিক বলতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, শুধু সংশ্লিষ্ট বিভাগে সাংবাদিক নিয়োগ করার অধিকার তাদের থাকবে। এ ছাড়া জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বিষয়ের সংবাদ প্রকাশের জন্য জাতীয় প্রিন্ট সংবাদপত্র বা জাতীয় অনলাইন পোর্টালের খবরের সূত্র হিসাবে প্রকাশ করতে পারবে, নিজস্ব সংবাদ হিসাবে প্রকাশ করতে পারবে না। ক্যাটাগরি-৩ স্থানীয় বলতে সংশ্লিষ্ট জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, শুধু সংশ্লিষ্ট জেলায় সাংবাদিক নিয়োগ করার অধিকার তাদের থাকবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বিষয়ের সংবাদ প্রকাশের জন্য জাতীয় প্রিন্ট সংবাদপত্র বা জাতীয় অনলাইন পোর্টালের খবরের সূত্র হিসেবে প্রকাশ করতে পারবে, নিজস্ব সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করতে পারবে না। ক্যাটাগরি-৪ কমিউনিটি ভিত্তিক বলতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কারিগরি শিক্ষা, প্রযুক্তি, কৃষি, সমাজ, নারী, কর্মসংস্থান, পরিবেশ, আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, সাংস্কৃতিক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদকবিরোধী ও নির্দিষ্ট উপজেলাভিত্তিক নিউজ পোর্টালসমূহকে বোঝাবে, শুধু সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশব্যাপী ও উপজেলার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট উপজেলায় সাংবাদিক নিয়োগ করার অধিকার তাদের থাকবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বিষয়ের সংবাদ প্রকাশের জন্য জাতীয় প্রিন্ট সংবাদপত্র বা জাতীয় অনলাইন পোর্টালের খবরের সূত্র হিসেবে প্রকাশ করতে পারবে, নিজস্ব সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করতে পারবে না।

উল্লেখ্য, প্রাইভেট এফ এম রেডিও স্থাপনের ক্ষেত্রে জামানত ফি-১০ লাখ টাকা, লাইসেন্স ফি-৫ লাখ ও নবায়ন ফি ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা আছে। পক্ষান্তরে কমিউনিটি রেডিও স্থাপনের ক্ষেত্রে জামানত ফি ১ লাখ টাকা, লাইসেন্স ফি ২০ হাজার ও নবায়ন ফি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় এফ এম রেডিও ও কমিউনিটি রেডিও স্থাপনের জামানত ফির পার্থক্য ১০ ভাগের ১ ভাগ, লাইসেন্স ফির পার্থক্য ২৫ ভাগের ১ ভাগ, নবায়ন ফির পার্থক্য ১০ ভাগের ১ ভাগ।

যেখানে প্রিন্ট মিডিয়া বের করতে কোনো লাইসেন্স ফি দিতে হয় না; বরং নিউজপ্রিন্ট আমদানিসহ যন্ত্রপাতি আমদানিতে রয়েছে নানা ট্যাক্স ফ্রি। পক্ষান্তরে নীতিমালা অনুযায়ী অনলাইন পত্রিকা বের করতে ব্যাংক ডিপোজিট-৫ লাখ টাকা, জামানত ফি-২ লাখ, লাইসেন্স ফি-৫০ হাজার ও নবায়ন ফি ৫০ হাজার, আবেদন ফরম ৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। তাই যদি ক্যাটাগরির ভিত্তিতে নিবন্ধন দেওয়া হয়; সেক্ষেত্রে যদি ক্যাটাগরি-১. ব্যাংক ডিপোজিট-৫ হাজার লাখ টাকা, জামানত ফি ২ লাখ, লাইসেন্স ফি ৫ হাজার ও নবায়ন ফি ৫০ হাজার, আবেদন ফরম ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে ক্যাটাগরি-২. ব্যাংক ডিপোজিট-২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, জামানত ফি ১ লাখ, লাইসেন্স ফি ২৫ হাজার ও নবায়ন ফি ২৫ হাজার, আবেদন ফরম ২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ, ক্যাটাগরি-৩. ব্যাংক ডিপোজিট-১ লাখ টাকা, জামানত ফি ৫০ হাজার, লাইসেন্স ফি-১০ হাজার ও নবায়ন ১০ হাজার, আবেদন ফরম ১ হাজার টাকা নির্ধারণ, ক্যাটাগরি-৪. ব্যাংক ডিপোজিট-৫০ হাজার টাকা, জামানত ফি ২০ হাজার, লাইসেন্স ফি ৫ হাজার ও নবায়ন ফি ৫ হাজার, আবেদন ফরম ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া যদি ক্যাটাগরি-১-এর কোনো খাতের ফি বাড়ানো বা কমানো হয়; সেক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যাটাগরির ফি সমূহ আনুপাতিক হারে বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।

যেহেতু নিউজ পোর্টালের নিবন্ধন হবে ক্যাটাগরির ভিত্তিতে; সেক্ষেত্রে প্রতিটি পোর্টালের লোগো, টেমপ্লেট ও নামের স্থানে ক্যাটাগরি-১-এর ক্ষেত্রে অনলাইন ন্যাশনাল নিউজ পোর্টাল, ক্যাটাগরি-২-এর ক্ষেত্রে অনলাইন রিজিওনাল নিউজ পোর্টাল, ক্যাটাগরি-৩-এর ক্ষেত্রে অনলাইন লোকাল নিউজ পোর্টাল ও ক্যাটাগরি-৪-এর ক্ষেত্রে অনলাইন কমিউনিটি নিউজ পোর্টাল লেখা বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে। এ ছাড়া অনলাইন নিউজ পোর্টালসমূহ যেকোনো সময় নির্ধারিত ফি ও শর্তপূরণ সাপেক্ষে ক্যাটাগরি পরিবর্তন করতে পারবে অর্থাৎ ক্যাটাগরি-২-৩-৪ থেকে ক্যাটাগরি-১-এ যেতে পারবে।

বর্তমানে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবভিত্তিক অনেক নিউজ পোর্টাল রয়েছে, যা নিবন্ধনবহির্ভূত। স্বতন্ত্র ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবভিত্তিক নিউজ পোর্টালসমূহকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। এ ছাড়া নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টালর ও প্রিন্ট মিডিয়ার ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ভার্সন তাদের মূল নিবন্ধনের আওতায় নিউজ প্রকাশ করতে পারবে।

লেখক : ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর

ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close