reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১২ নভেম্বর, ২০১৯

দুর্যোগ মোকাবিলায় সাফল্য ধরে রাখতে হবে

দুর্যোগ মোকাবিলায় উন্নত প্রযুক্তি সব সময়ই সহায়ক। বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল। প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেই আমাদের বেঁচে থাকা। প্রায় প্রতি বছরই ছোট-বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামাল দিয়েই আমাদের পথচলা। বুলবুলও সে রকম একটি দুর্যোগ। আমরা সামাল দিয়েছি। সাধারণত যে পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেখান থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। রক্ষা পেয়েছি দুটি কারণে। প্রথমত. সুন্দরবন বিশাল ক্ষমতাধর এই ঘূর্ণিঝড়ের সামনে ঢাল হয়ে প্রথম ধাক্কাটি সামাল দিয়েছে। আর দ্বিতীয়টি সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা। এতকাল আমরা দেখেছি, ব্যবস্থাপনার অভাবে হতাহতের ভয়ংকর চিত্র। এবার তা দেখতে হয়নি। অনেকে বলতে পারেন, ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ায় প্রকৃত চিত্রের হাত থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পেয়েছে। বাক্যটির সত্যতা মেনে নিলেও বলতে হয়, ব্যবস্থাপনা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আশাজাগানিয়ার গান শুনিয়েছে। আমরা সরকারের এ রকম ভূমিকাই দেখতে আগ্রহী। এ রকম দুর্যোগকালীন সরকার তার সর্বশক্তিসহ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবেÑ এটাই স্বাভাবিক। এবার সরকার সেই স্বাভাবিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঝড়ের তান্ডব যেটুকু ক্ষতের জন্ম দিয়েছে, তা সারিয়ে তোলার দায়িত্বও সরকারের। বাস্তবতা বলছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছে। চলছে পুনর্বাসন।

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া বুলবুল গত শনিবার মধ্যরাতে আছড়ে পড়ে বাংলাদেশের উপকূলের ওপর। তবে এবারও বুক চিতিয়ে প্রথম আঘাত সহ্য করে এর প্রচন্ডতা থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। প্রথমে ভারতীয় অংশের সুন্দরবনের সাগরদ্বীপে আঘাত হানে বুলবুল। এরপর এটি বাংলাদেশের সুন্দরবনের খুলনা অংশে ঢুকে পড়ে। দুই দেশের সুন্দরবনের গাছপালায় বাধা পেয়ে দুর্বল বুলবুলের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার কমে যায়। কমে আসে জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা। এর আগেও ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ নালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলাও সুন্দরবনের বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তবে গত দুই দফার ঘুর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি ছিল এবারের তুলনায় বেশি।

বুলবুল আঘাত হানার আগে উপকূলীয় অঞ্চলের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়প্রার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ভিড় বাড়তে থাকে। কোনো কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রিতদের সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারের পূর্ব-প্রস্তুতি ও ইতিবাচক সমন্বয় বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করেছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তায় সাতক্ষীরায় ৫টি, চট্টগ্রামে ৩টি ও সেন্টমার্টিনে ২টি যুদ্ধজাহাজসহ নৌ-কন্টিনজেন্ট ও মেডিকেল টিম তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। খুলনা অঞ্চলের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় বানৌজা কর্ণফুলী, তিস্তা, পদ্মা, এলসিভিপি১২ ও এলসিভিপি১৩ তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও খুলনায় দ্রুততম সময়ে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে নৌবাহিনীর জাহাজ।

ক্ষয়ক্ষতির বিষয়াদি উল্লেখ করতে হলে বলতে হয়, প্রাণহানির সংখ্যা ১৪। আহত ২৫। সহস্রাধিক বাড়ি ভেঙে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৩ লাখ হেক্টর ফসলি জমি। তার পরও মানুষ ভেঙে পড়েনি। তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। আমরা মনে করি, সরকার সব সহযোগিতাসহ তাদের পাশে থাকবে এবং দুর্যোগপীড়িত মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যেই আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close