reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ নভেম্বর, ২০১৯

ইসলামে ঋণ পরিশোধের নিয়ম

(পূর্ব প্রকাশিতের পরের অংশ)

এ বিষয়ে হজরত সালমা ইবনুল আক্বওয়া (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা রাসুল (সা.)-এর নিকট বসাছিলাম, এমতাবস্থায় একটি জানাজা পড়ার জন্য উপস্থিত করা হলো। লোকেরা নবী করিম (সা.) কে জানাজা পড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। রাসুল (সা.) বললেন, তার ওপর কি কোনো ঋণ আছে? লোকেরা বললেন, জিনা ঋণ নেই, তখন নবীজী জানাজা পড়ালেন। অতঃপর একটি জানাজা উপস্থিত করা হলো, তখন রাসুল (সা.) বললেন, তার ওপর কোনো ঋণ আছে কি? লোকেরা উত্তরে বলা হলো, জি আছে। রাসুল (সা.) বললেন, সে কোনো বস্তু রেখে গেছে কি? লোকেরা বলল, তিনটি দিনার। রাসুল (সা.) তখন তার জানাজা পড়ালেন। অতঃপর তৃতীয় আরেকটি জানাজা উপস্থিত করা হলো। রাসুল (সা.) বললেন, তার ওপর ঋণ রয়েছে কি? লোকেরা বলল, তার ওপর তিনটি স্বর্ণমুদ্রা ঋণ রয়েছে। রাসুল (সা.) বললেন, সে কিছু রেখে গিয়েছে কি? লোকেরা বলল, ‘না’। রাসুল (সা.) বললেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাজা পড়ে নাও। হজরত আবু কাতাদাহ বললেন, ইয়া রাসুলুুল্লাহ (সা.) তার জানাজা পড়িয়ে দিন আর তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমার ওপর আমি গ্রহণ করলাম। তখন নবী করিম (সা.) জানাজা পড়িয়ে দিলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের বোঝা উচিত রাসুল (সা.) ঋণি ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়াতে অনীহার কারণ হলোÑ ঋণের ব্যাপারে লোকদের সতর্ক করা বা আদায়ে টালবাহানা করার নিন্দা জ্ঞাপন বা এমন ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে অপছন্দ করা, যার ওপর ঋণ রয়েছে; যা জুলুমের সমতুল্য। হুজুর (সা.) মৃতদের ঋণ বায়তুল মাল হতে পরিশোধ করতেন। আমার কেউ বলেছেন, রাসুল (সা.) নিজের সম্পদ থেকেই মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করতেন, মুমিন ব্যক্তির রুহ ঝুলন্ত থাকে ঋণের কারণে। কিছু কিছু লোক আছে ঋণ দ্বারা ঋণ উদ্দেশ্য, যা সে বিনা প্রয়োজনে মানুষ থেকে নিয়েছে এবং যা অনর্থক ও অযথা কাজে ব্যয় করেছে। তবে যে ব্যক্তি তার বাস্তবিক প্রয়োজনের তাগিদে ঋণ নিয়েছে। সে যদি তা আদায়ের আগে মারা যায়। তাহলে এমন ঋণ তাকে জান্নাতে প্রবেশ ও নেককারদের সঙ্গে মিলিত হতে প্রতিবন্ধকতা হবে না। নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, বান্দা আল্লাহ তায়ালার নিকট উপস্থিত হলে কবিরা গুনাহসমূহের পরেই সর্বশ্রেষ্ঠ গোনাহ পরিগণিত হবে, এমতাবস্থায় মৃত্যু হওয়া যে, সে ঋণগ্রস্ত হয় এবং তা পরিশোধের ব্যবস্থা রেখে না যায় (আবু দাউদ)।

ঋণের বোঝা নিয়ে মত্যুবরণকে কবিরা গোনাহের পর স্থান দেওয়ার কারণ হলো, কবিরা গোনাহ তো এমনিতে নিষিদ্ধ। কিন্তু ঋণ তো কোনো গোনাহের কাজ নয়, সেটা কবিরা গোনা হবে বরং প্রয়োজনের তাগিদে ঋণগ্রহণকে মোস্তাহাব বলা হয়েছে। সুতরাং ঋণগ্রহণকে যে কোথাও নিষেধ করা হয়েছে, তা এজন্য যেও কখনো কখনো বিভিন্ন কারণে ঋণগ্রহণের দ্বারা মানুষের হক নষ্ট হয়। ঋণগ্রহীতা যখন ঋণ পরিশোধ না করে, তখন ঋণদাতা ব্যক্তির মাল অযথা নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহণ গোনাহে পরিণত হয়। এ বিষয়ে এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.) তার খেদমতে আসিয়া আরজ করিল ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি ঋণের ভারে জর্জরিত হইয়াছি। কীভাবে ঋণমুক্ত হইতে পারি বলিয়া দিন, রাসুল (সা.) বললেন, নিম্নের দোয়া ফজর ও এশার নামাজ বাদ পড়বেÑ ‘বিসমিল্লাহি আলা বিনাফসি ওয়া আহলি ওয়া মালি আল্লাহু মমা বারিকলি ফি কাদাইতা হাত্তা লা উহিববু তাহ জিলি শাইয়াও ওয়া আখিরাতি ওয়াজ খাইরি শাওয়াও আজিলাত’ যদি কেউ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদাইয়ের পর আল্লাহুম্মাক ফিনি বি-হালালিকা আন হারমিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান ছেওয়াক। প্রতি এশার নামাজের পর যদি কেউ সুরা ওয়াকেআ পড়েন, আল্লাহ সব ঋণ থেকে মুক্তি দেবেন। তবে আমল করার আগে কোনো বুজুর্গ অনুমতি দেওয়া কর্তব্য। মহান আল্লাহ সবার ঋণ পরিশোধ করার তৌফিক দিন। আমিন।

লেখক : ডা. কারি মাওলানা

শেখ সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ আহাম্মেদ

পীর সাহেব মাধবদী রহমানিয়া দরবার শরিফ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close