এহসান বিন মুজাহির

  ১৮ অক্টোবর, ২০১৯

পরামর্শ

রোগ তাড়াতে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়তে হবে

দৈনন্দিন জীবনে আমরা আমাদের হাত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি। কাজ করতে গিয়ে আমাদের হাত নানা ধরনের জীবাণুর সংস্পর্শে আসে, যার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারে শিশুদের ডায়রিয়া কমে শতকরা ৩২ ভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষায় ৩২ ভাগ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ২৫ ভাগ আর সঠিক নিয়মে হাত ধুলে ৪৪ ভাগ।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস একটি ভালো ভ্যাকসিনের চেয়েও বেশি কাজ করে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়Ñ প্রতি বছর পাঁচ বছরের নিচে প্রায় ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন শিশু ডায়রিয়ায় বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। নিয়মিত ও সময়মতো হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস, ডায়রিয়া, কৃমিরোগসহ অনেক জীবাণু দ্বারা সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। নানা কারণে আমাদের হাত নোংরা হয়ে প্রতিদিন অসংখ্য জীবাণু দেহে সংক্রমিত হয়। তাই নিয়মিত দিনে অন্তত পাঁচবার সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া দরকার। কিছু ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস একটি ভালো ভ্যাকসিনের চেয়েও বেশি কাজ করে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস ডায়রিয়া এবং নানা রকম শ্বাসতন্ত্রের রোগের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর প্রক্রিয়া। নিয়মিত দিনে অন্তত পাঁচবার সঠিক নিয়মে হাত ধুলে মৃত্যুর হার প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব।

স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, টয়লেট ব্যবহারের পর এবং খাওয়ার আগে ও পরে তো বটেই, যেকোনো কাজের পর ভালো করে হাত ধুয়ে নিলে নানা রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায় সহজেই। সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে পারলে পানি ও মলবাহিত রোগগুলো সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। হাত ধোয়ার কিছু নিয়ম আছে। শুধু পানি দিয়ে হাত ধুলে বাহ্যিকভাবে পরিষ্কার হয় সত্যি, কিন্তু জীবাণুমুক্ত হয় না। জীবাণু প্রতিরোধে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হয়। তিনবার খাওয়ার আগে-পরে এবং খাদ্য প্রস্তুত করা বা পরিবেশনের আগে-পরে, কাঁচা মাছ, গোশত, ডিম বা শাকসবজি স্পর্শ করা, ময়লা-আবর্জনা স্পর্শ করা, হাত দিয়ে নাক ঝাড়ার এবং হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দেওয়ার পর, মুরগি বা গৃহপালিত পাখির মাংস, কাঁচা ডিম বা সি ফুড ধরা, খাবার তৈরি করার আগে-পরে, প্রতিবার বাথরুম যাওয়ার পর ভালো করে হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত। এতে ফুড পয়োজনিং অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু নিয়মিত হাত ধুলে খাদ্যবাহিত প্রায় ৫০ ও সর্দিজনিত ২৫ শতাংশ সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

হাত ধোয়ার কিছু নির্দিষ্ট ধাপ রয়েছে। ধাপগুলো অনুসরণ না করলে হাত ধোয়া সঠিক হবে না। প্রথমে পানি দিয়ে হাত ভেজাতে হবে। তারপর সাবান নিয়ে দুই হাতে মেখে ফেনা করতে হবে। দুই হাতে সেই ফেনা ব্যবহার করে হাতের উভয় দিক, আঙুলের ফাঁক, নখের নিচে ও কিনার, বুড়ো আঙুলের গোড়া ও কবজি খুব ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে। তারপর ট্যাপের প্রবহমান পানিতে হাত ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। ট্যাপটি বাম হাতে বন্ধ করতে হবে। পরিষ্কা তোয়ালে বা গামছা দিয়ে হাত শুকিয়ে নিতে হবে। সাবান ও পানি না পাওয়া গেলে সংগ্রহ করা যায় জেল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা অ্যালকোহল হ্যান্ড ওয়াইপস। জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর হচ্ছে সাবান, লিকুইড সোপ ও হ্যান্ড রাব। হাসপাতাল ছাড়া সাধারণ গৃহস্থালি, অফিস-আদালতে হাত জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য সাবান বা লিকুইড সোপ দিয়ে হাত ধুলেই চলে। লিকুইড সোপ নিলে প্রতিবার হাত ধোয়ার সময় অন্তত তিন মিলিলিটার নেওয়া উচিত। হাত পরিষ্কার রাখার অভ্যাস সবারই থাকা দরকার। যার মাধ্যমে সহজেই রোগ থেকে বাঁচা যায়। হাত নানা ধরনের জীবাণু বহন করে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। তাই রোগমুক্ত থাকতে নিয়মিত সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস একটি ভালো ভ্যাকসিনের চেয়ে বেশি কাজ করে। প্রতি বছর শুধু দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরাই নয়, আমাদের সবার উচিত প্রতিদিন সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া ও অন্যদেরও হাত ধোয়ায় উৎসাহিত করা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close