রহমানিয়া দরবার শরিফ

  ১৮ অক্টোবর, ২০১৯

সুদ হারাম হওয়ার কারণ

ফা ইললাম তাফ আলু ফাজনুয় বি হারবিম মিনানাল্লাহি ওয়া রাসুলিহÑ সুতরাং যদি তোমরা সুদ খাওয়া হতে বিরত না হও, তাহলে আল্লাহ ও তার রসুলের পক্ষ হতে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে রেখো। নবী করিম সাল্লাল্লাহু তায়ালা বলেন, এক দেরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়া ৩৬ বার ব্যভিচার হতে জঘন্য।

সুদ একটি অর্থনৈতিক অভিশাপ। এর ধ্বংস সর্বদাই দরিদ্রের রক্তের পুঁজিবাদীদের রঞ্জিত করেছে এবং তাদের অস্তিত্বের দ্বারা পুঁজিবাদীদের আরাম-আয়েশের খোরাক জুগিয়েছে। এহেন অভিশপ্ত কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে রসুল (স.) এরশাদ করেন, হজরত জাবের (র.) হতে বর্ণিত, লানত অভিশাপ করেছেন, যে সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের দলিল লেখে এবং যে দুজন লোক সুদের সাক্ষী হয় তাদের প্রতি। অভিশাপ। রাসুলল্লাহ (স.) এটাও বলেছেন, গোনাহগার সাব্যস্ত হওয়ার দিক থেকে তারা সকলেই সমান। (মুসলিম শরিফ) নবী (স.) এও বলেছেন, যে (হুম দাওয়াউন) গোনাহগার সাব্যস্ত হওয়ার দিক থেকে তারা সকলেই সমান।

বর্তমানে সুদের যে বিস্তার লাভ করেছে সুদিদের কারণে সমাজে জেনা, ব্যভিচার, অন্যায়, অপরাধ বেড়েছে। সুদের দলিল লেখক ও সাক্ষীদের ওপর অভিশম্পাতের কারণ হলো তারা একটি হারাম ও অবৈধ কাজের সহায়ক হওয়ার কারণে তাদের ওপর আল্লাহর লানত। সুদকে জেনার চেয়ে জঘন্য বলার আরেকটা কারণ হলোÑ সুদের কারণে মানুষ আকিদাগত ভ্রান্তিতে লিপ্ত হয়। ফলে সে সুদ হারাম হওয়া সত্ত্বেও সেটাকে হালাল মনে করে। আর হারাম কে হালাল মনে করার পরিণতি হলো কুফুরি সমতুল্য। যা ক্ষমার অযোগ্য। এ কারণেই সুদকে জেনার চেয়ে জঘন্য বলা হয়েছে।

হজরতে আবু হোরায়রা (র.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সুদের গোনাহের ৭০টি অংশ রয়েছে। এর ক্ষুদ্রতম অংশ এই পরিমাণ যে, কোনো ব্যক্তি যেন স্বীয় মায়ের সফঙ্গ সহবাস করে। সুদের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাহ্যত অধিক অনভূত হয়। কিন্তু যেহেতু কল্যাণের কোনো অংশই তাতে বিদ্যমান থাকে না, তাই এর পরিণতিতে সেই মাল এমনভাবে ধ্বংস ওবিনাশ সাধিত হয় যে, তার নামচিহ্নও অবশিষ্ট থাকে না। এ কথাটি শুধু একটি সতর্ক বাণীই নয়, বরং এর বাস্তবতা দিবালোকের ন্যায় সত্যে পরিণত হয়ে পড়েছে।

এই বাস্তবতাকে কোরআনুল কারিমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

ইরশাদ হচ্ছেÑ ইয়াম হাকুল্লাহ হুর রিবা ওয়ার বিছ ছদাকতি। এর অর্থ যে সম্পদ সুদের দ্বারা অর্জন করা হয় আল্লাহ তায়ালা সেটাকে ধ্বংস করে দেন। পক্ষান্তরে যে সম্পদ নিজের পরিশ্রমের দ্বারা উপার্জিত হয়। তা হতে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, আল্লাহ তায়ালা সেই সম্পদ বৃদ্ধি করে দেন। এ আয়াতে সুদ ও সদকাকে একত্রে উল্লেখ করে, এ কথাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, উভয়টার তাৎপর্য ও ফলাফল বিপরীতধর্মী।

মুফাসসিরগণ লিখেছেন যে, সুদকে বিনাস করো ও সদকাকে বৃদ্ধি করাÑ এটি পরকাল সম্পর্কিত ব্যাপার। অর্থাৎ সুদখোরকে তার সম্পদ পরকালে কোনো উপকারই করবে না। বরং শাস্তি বৃদ্ধি করবে। সুদের ফলাফল দুনিয়ার বেলায়ও প্রযোজ্য। সুতরাং ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সুদকে চিরদিনের জন্য পরিহার করা সকলের জন্য অপরিহার্য।

লেখক : ডা. কারি মাওলানা

শেখ সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ আহাম্মেদ

পীর সাহেব, মাধবদী

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close