কার্বন নিঃসরণের নতুন পথ খুঁজতে হবে
পুঁজির ধর্মই হচ্ছে মুনাফা। আর এই মুনাফার পেছনে ছুটতে ছুটতে বিশ্বকে নিঃস্ব করে তুলেছি আমরা। অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কারণে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই একটি মাত্র কারণে এক সময় পৃথিবীর উপকূলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাই তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে পানির অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে। প্রকৃতিতে নেমে আসবে এক মহাবিপর্যয়। তবুও থেমে নেই ভোগবাদী সমাজের লাগামহীন মুনাফা লাভের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি বিশেষের মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগিতা। গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী ২০টি জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি।
গবেষকরা বলেন, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোম্পানির দোসর ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো জলবায়ু বিপর্যয়কে ডেকে আনছে, যা মানবজাতির ভবিষ্যতকে নিয়ে ফেলছে হুমকির মুখে। তাদের কাজগুলো যে পরিবেশের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব রেখে চলেছে, এ বিষয়গুলো অবহিত হওয়ার পরও তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের লক্ষ্য একটিই। পৃথিবীর সব সম্পদ কুক্ষিগত করা। এসব মানুষের মানুষ হিসেবে কোনো ধর্মে আনুগত্য নেই। পুঁজির ধর্মই তাদের ধর্ম। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাইমেট অ্যাকাউন্টেবিলিটি ইনস্টিটিউটের গবেষক রিচার্ড হিডে তার বিশ্লেষণে বলেন, বৈশ্বিক করপোরেশনগুলো ভূগর্ভস্থ জ্বালানি সংগ্রহ করছে এবং ১৯৬৫ সালের পর থেকে কার্বন নিঃসরণে শীর্ষ ভূমিকা পালন করছে। জীবাশ্ম জ্বালানির প্রভাব সম্পর্কে কোম্পানিগুলো ও রাজনীতিবিদ উভয় পক্ষই বেশ ভালোভাবে অবগত হওয়ার পরও তাদের পক্ষ থেকে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
গবেষণা বলছে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসংশ্লিষ্ট মোট কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেন নিঃসরণের পেছনে ৩৫ শতাংশ অবদান শীর্ষ ২০টি কোম্পানির। ১৯৬৫ সালের পর থেকে তারা ৪৮০ বিলিয়ন টন সমপরিমাণের কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করেছে। আর শীর্ষ এই ২০ জলবায়ু অপরাধীদের ৯০ শতাংশ নিঃসরণ হচ্ছে পেট্রল, জেট ফুয়েল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও তাপ কয়লার মতো তাদের নিজস্ব পণ্য থেকে। বাকি এক-দশমাংশ নিঃসরণ হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন, পরিশোধন ও ফিনিশড ফুয়েল সরবরাহের সময়। তবে শীর্ষ ২০ কোম্পানির মাঝে কয়েকটি কোম্পানি বলেছে, তারা এককভাবে সরাসরি দায়ী নন। বেশিরভাগ বলেন, বিজ্ঞানীদের মতামতের সঙ্গে তাদের কোনো দ্বিমত নেই। তারা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে আগ্রহী।
কার্বন নিঃসরণ যে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়, এ প্রশ্নে আজ আর কারো দ্বিমত নেই। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন! এ প্রশ্নের জবাবে বলতে হয়, না হওয়ার কারণ ‘চরিত্র’। পুঁজির লাগামহীন মুনাফা অর্জনের চরিত্র থেকে বেরিয়ে এসে মুনাফাকারীরা নিজেদের চরিত্রকে মানবিক করতে না পারবেন, তত দিন কোনো মুক্তি নেই। আমরা মনে করি, বৃহত্তর স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্রতম স্বার্থকে বলি দিতে পারলেই মানব সভ্যতার জয় হবে। এর ব্যত্যয় হলে, পাপীকে একদিন নিজের লাগানো আগুনে নিজেকেই পুড়তে হবে। তবে প্রবচন বলছে, ‘পাপী মরে দশ ঘর নিয়ে’। অর্থাৎ পৃথিবীর ধ্বংস সমাগত। এখনো সময় আছে, আসুন আমরা সংযত হই এবং এই বিতর্কিত পৃথিবীকে আমাদের বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি।
"