reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিশেষ স্পর্শকাতর দেশ হিসেবে বিবেচনা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার কারণে এ দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। গত বুধবার প্রকাশিত এক অর্থনৈতিক মূল্যায়নে আইএমএফ বলেছে, কয়েকটি সূচকে দেখা গেছে ১৯৯৭-১৭ সাল মেয়াদে (গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স) চরম বৈরী আবহাওয়াজনিত ঘটনায় আক্রান্ত শীর্ষ দশ দেশের একটি বাংলাদেশ। জাতিসংঘের জলবায়ু-সংক্রান্ত আন্তরাষ্ট্রীয় প্যানেল বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূলে ভাঙনের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ জমির পরিমাণ ১৭ শতাংশ এবং খাদ্য উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে। আইএমএফের মতে, পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যতম সক্রিয় দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়, হিমালয় গলতে থাকা হিমবাহ, খরা, অনিয়মিত বৃষ্টি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর হুমকি সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক সমীক্ষা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ, ‘বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও আফগানিস্তান’-এ শস্যের ফলন কমে যাওয়ার হুমকি রয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী আগামী দু-এক দশকের মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের জলবায়ু যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, তা সামনের দশকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারে। তথ্য মতে, আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে সাব সাহারান আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এসব অঞ্চলে তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেবে। বন্যা, খরা আর মহামারীর কারণে লাখ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়ে অন্য অঞ্চলে পাড়ি জমাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রতল ৯ থেকে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং কার্বন নির্গমনের উচ্চহারে যে বৈশ্বিক উষ্ণতা হচ্ছে, তার ফলে সমুদ্রতল ১৬ থেকে ৬৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়বে। ফলে খাদ্যসংকট ও স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভূমির এক-তৃতীয়াংশ পানিতে নিমজ্জিত হবে। সমুদ্রের পাশের অঞ্চলের মানুষরা বাস্তুভিটা হারিয়ে উদ্বাস্তু অথবা শরণার্থীর তালিকায় নাম লেখাবে। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটবে। দেশে বিশুদ্ধ পানির সংকট বেড়ে যাবে। এমনকি খাদ্যশস্যে তেজস্ক্রিয়তাও বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়কে একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর হুমকি বলে বিবেচনা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। আমরা মনে করি, এক মুহূর্ত সময় ক্ষেপণ না করে সঠিক পরিকল্পনায় এগিয়ে যেতে হবে। এরই মধ্যে সরকার বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। তবে তা আগামী দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত নয়। ভবিষ্যতের এই মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারকে আরো গতিশীল ভূমিকায় এগিয়ে আসতে হবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে এটিই আজ সময়ের সর্বোচ্চ দাবি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close