reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

দুর্নীতিকে না বলুন

দুর্নীতির পক্ষে হ্যাঁ বলবেন, এ ধরনের একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবু দুর্নীতিতে ভেসে যাচ্ছে দেশ। যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, সম্ভবত তারাও বলবেন, আমরা দুর্নীতির বিরোধিতা করি। যদিও তাদের এ বক্তব্যের মধ্যে সততার লেশমাত্রও নেই, তবু তারা বলার সময় দুর্নীতির বিপক্ষে হাত ওঠাবেন। বড় বড় সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের বক্তৃতায় আসর মাত করে যখন অফিসের কর্ণধার হয়ে অফিসের চেয়ারে বসবেন, তখন চরিত্রের রং বদলে যাবে। তিনি বলবেন, আমাকে দোষী সাব্যস্ত করবেন না। দোষটা আমার নয়, চেয়ারের। চেয়ারটাই আমার চরিত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। সম্ভবত বাংলাদেশের সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ছোট-বড় চেয়ারের অবস্থা অনেকটা এ রকম। স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যে এর বাইরে অবস্থান করছে, তা নয়। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় মাত্রার পরিমাণ হাজার গুণ বেশি। সম্ভবত সে কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে শিক্ষকরা লজ্জিত। তিনি বলেছেন, উন্নয়নকাজের টাকায় ছাত্রনেতারা ভাগ বসায়; এখান থেকে টাকা চায়; বিষয়টি অচিন্তনীয়। অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এসব ঘটছে। হয়তো এগুলো গণমাধ্যমে আসে না।

বাস্তবতা বলছে, সাবেক উপাচার্য সত্য বলেছেন। তার উচ্চারিত শব্দাবলির প্রমাণ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নেই। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও প্রতিনিয়তই এ ধরনের অনৈতিক কর্মকা- ঘটেই চলেছে। প্রতিদিনই এ ধরনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে দেশের পত্রপত্রিকায়। যার একটি নমুনা আজ উত্থাপন করা যায়। গতকাল বুধবার প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপো (সিএসএমডি) বা কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের কর্মকর্তারা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে কম্পিউটার কেনার নামে সরকারের ১৪ কোটি ৩১ লাখ ৪৭ হাজার টাকার বেশি লোপাট করেছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিদেশি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে দেশি প্রতিষ্ঠানের নামে এলসি খুলে এ অর্থ লোপাট করা হয়। চুক্তিতে ইউএস অরিজিনের পণ্য আমদানির কথা থাকলেও দায়িত্বরত কর্মকর্তারা চীনে তৈরি পণ্য আমদানি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। অডিটে মালামাল আমদানির নামে অর্র্থ আত্মসাতের ঘটনাটি ধরা পড়ে।

অপর একটি ঘটনায় একই প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের আত্মসাতের ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। ইটোপোসাইড ১০০ এমজি ইনজেকশনের খুচরামূল্য ৬০ টাকা। অথচ এটি ১৫০০ টাকা দরে কিনেছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার কর্তৃপক্ষ। ৫ হাজার টাকা মূল্যের পাল্স অক্সিমিটার কেনা হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা দরে। ১৪ টাকা মূল্যের অ্যামিকাইসিন ইনজেকশন কেনা হয়েছে ৭০০ টাকা দরে। এভাবে সিএমএসডির দায়িত্বপ্রপ্ত কর্মকর্তা এবং সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়ে মাত্রাতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে সরকারের ১১ কোটি ৬৬ লাখ ৫ হাজার টাকা লোপাট হয়েছে। সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে লোপাট করা অর্থ আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে। গত ২৭ জুন সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সপ্তম বৈঠক থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ঘটনা বিশ্লেষণে মনে হয়, সরকার যদি চায় তাহলে দুর্নীতি প্রতিরোধ খুব কঠিন কাজ নয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা এবং ডিএমএসডির ঘটনায় সরকারের ভূমিকা সে কথাই বলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছেন। সম্ভবত সেই ঘোষণার ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটতে শুরু করেছে। ঘটনাত্রয়ীই তার সাক্ষ্য। আমরা মনে করি, আগামীতে এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। আমরা সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close