reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

দমন করতে হবে কিশোর অপরাধ

গ্যাং শব্দের অর্থ সমষ্টি। শব্দটি কখনোই ইতিবাচক বাক্যে ব্যবহার হতে দেখা যায়নি। যখন কোনো জনসমষ্টি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, তখনই সেই জনসমষ্টির সঙ্গে গ্যাং শব্দটির সংযোগ ঘটে। ইদানীং কিশোরদের সঙ্গে এই শব্দটির সংযোগ ঘটেছে এবং তৈরি হয়েছে গ্যাং কালচার। শুরুটা ২০০১ সালে। মূলত মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, পার্টির আয়োজন করা এবং অংশ নেওয়া, হর্ন বাজিয়ে প্রচ- গতিতে মোটর বা কার রেসিং করা এবং দলবদ্ধভাবে মাদক গ্রহণের মধ্যে জীবনের স্বাদ খুঁজে পাওয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল এদের কর্মকা-। তবে এখন আর সে পর্যায়ে নেই। একের পর এক অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং। ছিনতাই-চাঁদাবাজি, অপহরণ-মাদক ব্যবসাসহ খুনের মতো মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে গ্যাং সদস্যরা। এদের গড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইন্ধন। কিশোর গ্যাংগুলোকে পুঁজি করে স্থানীয় প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা অপরাধ সংঘটিত করছে। বিপরীতে এদের এই অপকর্ম থেকে বের করে আনার মতো তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকরা বলেছেন, সমাজে নানা অসংগতি রয়েছে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে এদের আচরণে পরিবর্তন ঘটেছে। কিশোর বয়সে হিরোইজিম ভাবটা থাকবে। এই হিরোইজিমকে ইতিবাচক পথে পরিচালিত করা না গেলে এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসাটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। এ ছাড়া এই কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা একটি নেতিবাচক সিদ্ধান্ত। একইসঙ্গে ভিনদেশি সংস্কৃতির অবাধ অনুপ্রবেশ কিশোরদের মেধা ও মননকে ভয়ংকর করে তুলছে। এই কিশোরদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। স্থানবিশেষে এদের দলের এক-একটি নাম। ডিসকো বয়েজ, লাড়া দে, নাইন স্টার, ফিফটিন, ব্ল্যাক রোজ, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপারসহ শতাধিক নামের গ্যাং গ্রুপের কয়েক হাজার কিশোর এখন পুরো রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের অনেকেই মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঢাকা শিশু আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের নথি অনুযায়ী গত ১৫ বছরে রাজধানীতে কিশোর গ্যাং কালচার ও সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্বে ৮৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এদিকে গ্যাং-কালচারকে অবরুদ্ধ করার কাজে সরকারের তৎপরতা থাকলেও তাকে আশাব্যঞ্জক বলছেন না অনেকেই। তবে আশাব্যঞ্জক না হলেও সরকার বিষয়টিতে মনোযোগী হয়েছেন। গত শুক্রবার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ শতাধিক গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। আমরা মনে করি, এই গ্রেফতারই সমস্যার সমাধান নয়। কেননা, অধিকাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় দ-বিধি অনুযায়ী পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। আটক করে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠাতে হয়। এখানেই প্রশ্ন? এই শিশু-কিশোরদের কি আর সুপথে ফেরানো সম্ভব নয়! সমাজ বিজ্ঞানে সম্ভব নয় বলে কোনো পরিভাষা নেই। সবই সম্ভব। তবে প্রয়োজন একটি সিদ্ধান্তের। ওদের ভালো পথে ফিরিয়ে আনার আগে বর্ষীয়ানদের ভালো পথে ফিরে আসতে হবে। সর্বাগ্রে নিজ স্বার্থে তাদের ব্যবহার করা একেবারেই বন্ধ করতে হবে। যারা বন্ধ করবেন না তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে তৎপর হতে হবে। একই সঙ্গে অবাধ আকাশ মিডিয়ার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে এবং প্রত্যেক অভিভাবককে তীক্ষè নজরে রেখে সন্তানদের বেড়ে ওঠার বিষয়টি দেখভাল করতে হবে। কাজটি সহজ নয়। এক কথায়, এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন। যে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকবে সরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close