reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ আগস্ট, ২০১৯

আতঙ্কমুক্ত করা হোক পুরান ঢাকাকে

কবে হবে, এ কথা হলফ করে কেউ-ই বলতে পারেন না, বলার উপায়ও নেই। আতঙ্ক শব্দটি এখন অনেকটা সহোদরের মতো। চারপাশেই এদের বসবাস। কোনো দিকেই খালি নেই। দুটি সংবাদ শিরোনাম আমাদের কাটা ঘায়ে নুনের প্রলেপ দিয়ে গেল। সংবাদ শিরোনামের একটিতে বলা হয়েছে, এক দিনেই সড়কে ঝরল ২৪ প্রাণ। অপর শিরোনামে বলা হয়, প্রাণ গেলেও টনক নড়েনি। প্লাস্টিক কারখানায় আগুন।

পুরান ঢাকার উর্দু রোড থেকে রুদ্র লেন হয়ে চাঁদনী ঘাট। একটু দূরেই ওয়ালটার লেন ও ইসলামবাগ। পাশেই পোস্তার ঢাল। চারপাশে চুড়িহাট্টাসহ আলীগড়, দেবিদাশ ও গণি মিঞার ঘাট এবং শহীদনগর বেড়িবাঁধ, রহমতগঞ্জ লেন ও ফইড়াপট্টি। এতগুলো এলাকার কথা উত্থাপনের পেছনে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কার্যকারণ রয়েছে। এলাকার মানুষগুলোকে আবার নতুন করে আতঙ্কের ভূত ঘাড়ে নিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। এসব এলাকায় রাস্তার দুই পাশে নির্মিত অধিকাংশ ভবনের নিচেই রয়েছে প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামাল আর রাসায়নিকের গুদাম অথবা কারখানা। আর এখানেই ঘটে গেল একটি বড়মাপের অগ্নিকান্ড।

পুরান ঢাকার পোস্তার ঢালে একটি প্লাস্টিক কারখানায় গত বুধবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত হয়। পাশের একটি জুতার কারখানা এবং আরেক প্লাস্টিক কারখানার গোডাউনের বড় অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন বলতেই হয়। জীবনহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এর আগে দুই দফায় এই এলাকায় অগ্নিকান্ডে ব্যাপক জীবনহানির ঘটনা ঘটেছে। জীবনহানি না ঘটার পেছনে কারণ ছিল দুটি। এক. ঈদের ছুটি থাকায় কারখানাগুলো ছিল বন্ধ। দুই. আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল।

গত ফেব্রুয়ারিতে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে। তদন্তের পর জানা যায়, আগুনের সূত্রপাত হয় কারখানার রাসায়নিক থেকে। কিছুকাল এ নিয়ে বেশ হইচই হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুরান ঢাকা থেকে সব ধরনের কেমিক্যাল, গোডাউন ও প্লাস্টিক কারখানাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে পথিমধ্যে সেই কর্মযজ্ঞের অপমৃত্যু ঘটে। পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল ও গোডাউন আর কারখানা সরাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অগ্নিকান্ডের পর স্থানীয়রা বলেছেন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত। তবে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং এমন কোনো আলামতও তারা হাতে পাননি। আগুন কীভাবে লেগেছে, প্রশ্ন সেখানে নয়, প্রশ্ন অন্যত্র।

এ প্রশ্নে সবাই ঐকমত্য হয়ে বলছেন, এখানেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারত। আরো ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারত। আগুন লাগাটাই এখানে মুখ্য নয়। মুখ্য কারণটি হলো গুদামজাত কেমিক্যাল। যেকোনো মুহূর্তে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই দাহ্য পদার্থটি আগুন ছড়িয়ে দিতে পারঙ্গম। আমরা মনে করি, সরকারের জন্য এটি একটি সতর্কসংকেত। বড় কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়াই আছে। এখন তা প্রতিপালন করাটা হবে সরকারের কাজ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close