reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ আগস্ট, ২০১৯

দায়িত্বশীল মহলের বোধোদয় হোক

অ্যাম্বুলেন্সের জন্য গ্রিন সিগন্যাল সব সময়ের জন্য উন্মুক্ত। শুধু বিশেষ কোনো দেশের জন্য নয়, বিশ্বের সবখানে এটাই নিয়ম। আন্তর্জাতিক আইনে অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করা মানবতাবিরোধী একটি অপরাধও বটে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এ দেশে যারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত, তারাই যখন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান, তখন আর আমাদের অভিযোগ করার জায়গা থাকে না। মানুষ অসহায়ত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সম্প্রতি সে রকম একটি ঘটনা দেশের মানবিক মূল্যবোধকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে।

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ১ নম্বর ফেরিঘাট। এখানে টানা তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক স্কুলছাত্র বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে। অপেক্ষার কারণ, প্রজাতন্ত্রের একজন যুগ্মসচিব এ পথেই যাবেন। তিনি ঘাটে না পৌঁছানো পর্যন্ত ফেরিকে অপেক্ষা করতে হবে। নির্দেশটা ছিল মাদারীপুরের ডিসি মহোদয়ের। ডিসি মহোদয় অবশ্য বলেছেন, তিনি অ্যাম্বুলেন্সের কথা জানতেন না। ফেরিঘাটের ম্যানেজার বলেছেন, ডিসি স্যারের নির্দেশেই তিনি এ কাজ করেছেন। অধস্তন কর্মচারী-কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ মোতাবেক চলবেনÑ এটাও নিয়ম। কিন্তু ঊর্ধ্বতনরা কি কোনো অনৈতিক নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন? আর সেই অনৈতিক নির্দেশ পালন করা কি অধস্তনদের নৈতিক দায়িত্ব! সংবিধান বলছে, সরকারি কর্মকর্তারা হচ্ছেন জনগণের সেবক। ২১(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। আবার সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ মোতাবেক জনগণই হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক। কিন্তু কপাল মন্দ হলে যা হয়, এ দেশে সেবকরাই এখন মালিকের আসনে অধিষ্ঠিত। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কোপানলে পড়ে তিতাসের মতো এক কিশোরকে জীবন দিতে হলো। তিতাসের মৃত্যু আমাদের বলে গেল, শান্তিতে মরার অধিকারও আমরা হারালাম।

মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া নড়াইলের কালিয়া পৌর এলাকার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষকে (১১) নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স গত বৃহস্পতিবার রাতে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ফেরিতে ওঠে। কিন্তু সরকারের এটুআই প্রকল্পে দায়িত্বরত এক যুগ্মসচিবের গাড়ির জন্য তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর রাত ১১টার দিকে ফেরিটি শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা করে। তার আগেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যায় তিতাস। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএর কর্তাদের অনুরোধ করেও কোনো কাজ হয়নি। এমনকি সরকারি জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন করা হলেও ফেরি দ্রুত ছাড়তে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। নিহত তিতাসের মামা বলেছেন, ‘আমার বোন ফেরির লোকদের পায়ে ধরে মাটিতে পড়ে কেঁদেছে। তবুও ওরা ফেরি ছাড়েনি। উল্টো বলেছে ফেরি ছাড়লে তাদের চাকরি যাবে।’

এদিকে মহামান্য হাইকোর্ট বলেছেন, ভিআইপি শুধু রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী, বাকিরা রাষ্ট্রের চাকর। গত বুধবার যুগ্মসচিবের জন্য মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুতে করা এক রিটের মন্তব্যে আদালত এ কথা বলেন। আদালতের এই সত্য উচ্চারণের সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করে বলতে চাই, অলিখিত এবং স্বপ্রতিষ্ঠিত এই অনৈতিক বিধির অত্যাচার থেকে মুক্তি পতে চাই এবং একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের এই ভিআইপিসুলভ আচরণ ও মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close