reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ জুলাই, ২০১৯

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সর্বাত্মক ব্যবস্থা

পুরো রাজধানী এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে। শুধু তাই নয়, মশাবাহিত এই রোগটি দেশের মানুষের জন্যও আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রতিদিনই রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ফলে স্থান সংকুলান করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে নির্ধারিত শয্যার বাইরেও মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। একই দৃশ্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে অবস্থানরত শতাধিক শিক্ষার্থী আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উঠেছে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার দাবি। ঢাবি মেডিকেল সেন্টারে বেড়েছে রোগীর চাপ। স্থাপন করা হচ্ছে রক্তের প্লাটিলেট পরিমাপের যন্ত্র। এরই মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য সব ধরনের পরীক্ষার সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে রাজধানীর সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি হাসপাতালে একটি করে হেল্পডেস্ক বসবে। ডেঙ্গু আক্রান্তরা এই হেল্পডেস্কে গিয়ে যে কোনো তথ্য নিতে পারবেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভালো ব্যবস্থাপনা থাকলেও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হাসপাতালের জন্য এ রোগ অনেকটাই নতুন। তাই চিকিৎসা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন তারা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮৩ জন। এই সংখ্যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, বছরের শুরুর দিন থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১০ হাজার ৫২৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে থেকে ৭ হাজার ৮৪৯ জন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে এলেও সরকারি খাতায় মৃতের সংখ্যা আট জন। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, ঢাবিতেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে শতাধিক শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এক সহপাঠীর মৃত্যুর পর ঢাবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে, বর্তমানে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তাতে এডিস মশা নিস্তেজ হচ্ছে; কিন্তু মরছে না। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এডিস মশা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এজন্য বর্তমানের ওষুধ ছিটাতে হলে এর ডোজ বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের গাফিলতি করা যাবে না। পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিকে আরো জোরদার করতে হবে।

প্রত্যেক নাগরিকের উচিত বাড়িঘরের আশপাশে এডিসের প্রজনন হতে পারে এমন সব ব্রিডিং গ্রাউন্ডকে ধ্বংস করা। দিনের বেলায় অন্তত শিশুদের ঘুমের সময় মশারি ব্যবহার করাও সব অভিভাবকের দায়িত্ব। এবারের ডেঙ্গু শুধু বাংলাদেশেই নয়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এর ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা তথা দেশবাসীকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা আশা করব, চিকিৎসার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close