দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ২৭ জুন, ২০১৯

মুক্তমত

ক্রেতা অধিকার নিশ্চিত হোক

ক্রেতা অধিকার ও নিরাপদ পণ্য নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সম্পর্কে যে নির্দেশনা দিয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। হাইকোর্ট পণ্যের মান ঠিক রাখতে বছরজুড়ে বিএসটিআইকে নিয়মিত ল্যাব পরীক্ষারও নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালত বলেছেন, ল্যাব পরীক্ষার আগে লেনদেন হয়Ñ এমন অভিযোগ পেলে দুদকে নয়, সংশ্লিষ্টদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ভেজাল খাদ্যপণ্য ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রাখার বিষয়ে ভোক্তারা যাতে যেকোনো সময় অভিযোগ জানাতে পারেন সেজন্য দুই মাসের মধ্যে হটলাইন সার্ভিস চালু করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই হটলাইন চালুর আগ পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে ভোক্তারা যাতে ছুটির দিনসহ ২৪ ঘণ্টাই অভিযোগ জানাতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ১৯ আগস্ট এ আদেশের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে উপজেলা পর্যায়েও ভেজাল ও মানহীন পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার পরামর্শ দেয়। ভেজাল ও মানহীন পণ্যের হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষা এবং ক্রেতা অধিকার সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশনাগুলো মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবিদার।

রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকই ভোক্তা। একজন ভোক্তা হিসেবে রয়েছে তার ‘ভোক্তা অধিকার’। কিন্তু ভোক্তার অধিকার কী, তা জানেন না ভোক্তারাই। প্রতারিত হলে কী করতে হবে, কোথায় যেতে হবে, তাও ভোক্তাদের অজানা।

আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে কিছু কিছু বিড়ম্বনার শিকার হই। প্রায়শই আমরা বেশি টাকা দিয়ে পণ্য কিনি। আবার কখনো কখনো মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য কিনেও বিড়ম্বিত হই, পণ্য ফেরত দিতে চাইলে করতে হয় অনেক বাক-বিতর্ক। এ রকম পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার আমরা নানা সময়ে হয়ে থাকি। কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি বলে নীরবে সয়ে যাই, বেশির ভাগটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে। নিরাপদ এবং ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারাটা ভোক্তার অধিকার এবং তা আইন দ্বারা সংরক্ষিত। কেননা একটি রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকই ভোক্তা।

বিক্রেতারা যাতে কোনোভাবেই ক্রেতাদের ধোঁকা দিতে বা ঠকাতে না পারেন, সে লক্ষ্যেই ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ এবং তাদের অধিকার রক্ষায় একটি কার্যকর আইন প্রণয়নের দাবি ছিল অনেক দিন থেকেই। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে সংসদ কর্তৃক গৃহীত ‘ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ ২০০৯’ আইনটি ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এটুকু সত্য যে, আইনটি প্রণয়নের ফলে জনগণ এর সুফল পেয়েছে। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানও আগের থেকে অনেক সতর্ক হয়েছে।

অশিক্ষিত থেকে শুরু করে শিক্ষিত শ্রেণিও ‘ভোক্তা অধিকার আইন’ সম্পর্কে তেমনভাবে জানে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন দেশে এই আইনটি এখন অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত। এই আইনের ফলে বিভিন্ন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা ভোক্তা অধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যায্যতা। মূল্য দিয়ে ভেজাল পণ্য কিংবা নানামুখী সেবা ক্রয়ের কথা অনেক দেশে কল্পনাতীত। এই আইনে ভেজাল বা প্রতারণা করলে লাইসেন্স বাতিলসহ ফৌজদারি আইনে দন্ড দেওয়ার বিধানও রাখা আছে। আমাদের দেশেও এই আইন লঙ্ঘন করা হলে অর্থ জরিমানা ও কারাদন্ডসহ উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।

আইনের সুফল সব সময় নাগরিকের জন্যই এবং সেই আইনের সুফল ভোগ করার জন্য নাগরিককেই সচেতন হতে হয়, তা না হলে অসাধু শ্রেণি অন্যায়ভাবে সুবিধা নেবেÑ এটাই স্বাভাবিক। শুধু আইন এবং অধিদফতর থাকলেই চলবে না, সরকারি এবং বেসরকারিভাবে শহরগুলোতে প্রতিনিয়ত করতে হবে সচেতনতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক ক্যাম্পেইনিং। সঙ্গে সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে আয়োজন করতে হবে প্রচারণা কিংবা পথনাট্য; যাতে করে প্রত্যেক নাগরিক একজন ভোক্তা হিসেবে এই মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়। কাজেই ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতকরণে আইন প্রয়োগ, প্রশাসন ও নাগরিককে একই মাত্রায় কাজ করতে হবে এবং তার মধ্যে নাগরিক তথা ভোক্তার ভূমিকা হবে অন্যতম নিয়ামক।

লেখক : সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close