বিশ্বজিত রায়

  ২৪ জুন, ২০১৯

মুক্তমত

কৃষকের কথা ভাবতে হবে

কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অল্প দামেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ঋণের চাপ ও জীবিকার প্রয়োজনে ধান বিক্রি করতে গিয়ে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না কৃষক। কৃষকের এই দুর্দশাগ্রস্ত সময়েই ঘোষণা হয়েছে বাজেট। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিক্ষেত্রে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ বিলের ওপর ২০ শতাংশ রিবেট প্রদান অব্যাহত থাকবে। যার সুবিধা একচেটিয়াভাবে ভোগ করবেন সেচযন্ত্রের মালিকরা। যাতে কৃষকের কোনো উপকারই হবে না।

কৃষির মূল শক্তি দেশের ৮২ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক। তারা মনে করছেন, সেচযন্ত্রের ওপর বিদ্যুৎ বিলের এই সুবিধা সেচযন্ত্র মালিকদের প্রদান না করে ধান উৎপাদনকারী কৃষকদের প্রদান করা হলে ধানের উৎপাদন খরচ কিছুটা হলেও কমে আসবে। এতে লাভবান হবেন দেশের অধিকাংশ কৃষক। এ ছাড়াও কৃষির উন্নয়নে স্বাভাবিক বিনিয়োগের অতিরিক্ত হিসেবে কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এই বাজেটে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও অধিক তাপমাত্রাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদার করার কথাও বলা হয়েছে কৃষি বাজেটে। রয়েছে শস্যের বহুমুখীকরণ কার্যক্রম জৈব বালাই-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম জনপ্রিয়করণ ও খামার যান্ত্রিকীকরণ জোরদার করার কথা। কৃষকের সুবিধার্থে বাজেটের কৃষি বরাদ্দে এতসব বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কতটুকু উপকৃত হবেন কৃষক? বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের পূর্ণ সুফল যাতে পান কৃষক; সেদিকে নজর দিতে হবে। কৃষি ও কৃষকের সুবিধার্থে বাজেটে যে চিন্তা করেছে সরকার তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

গায়ের ঘাম ঝরিয়ে ফসল উৎপাদন করছেন কৃষক। খাদ্য জোগানের পাশাপাশি ভরিয়ে দিচ্ছেন দেশের সমৃদ্ধি গোলাঘর। দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণ এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রধান কারিগর কৃষকই থাকছেন অবহেলিত। এই কৃষকের হাড়খাটুনি পরিশ্রমে বেড়েছে রেকর্ড উৎপাদনশীলতা। একসময়ের খাদ্যাভাবের বাংলাদেশ উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। দেশকে এগিয়ে নিতে দুহাত ভরে উপহার দেওয়া উৎপাদন শক্তিধর সোনালি মানুষটি নানা সমস্যায় ভুগছেন দিনের পর দিন। সরকারি কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না কৃষক সমাজ। বাক চাতুর্যপনায় সরকারি সুযোগ-সুবিধার ফুলঝুরি থাকলেও বাস্তবে তা চোখে পড়ছে না। যেমন সরকারের পক্ষ থেকে ধান ও চাল ক্রয় করা হচ্ছে বলে প্রশংসা কুড়ানোর চেষ্টা চলছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক সরকারি কর্মকর্তা কৃষকের বাড়ি গিয়ে ধান ক্রয় করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। কিন্তু কজন কৃষক উপকৃত হতেৃণ; সে খবর কি কেউ রাখেন।

নিরুপায় কৃষক তার কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারছেন না। শুধু নীরবে মাথা ঠুকে চলেছেন। অনেকে রাগে-ক্ষোভে কৃষিকাজ ছেড়ে দেওয়ার পণ করছেন। কিন্তু বললেই কি ছেড়ে দিতে পারবেন পেশায়-নেশায় অন্তরঙ্গ এ কৃষিকর্ম। গ্রামের অধিকাংশ কৃষক যেহেতু কৃষির ওপর নির্ভরশীল; সেহেতু কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতে হবে তাদের। কিন্তু বয়সে বয়োবৃদ্ধ কৃষকরা কৃষির প্রতি আগ্রহী হলেও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম আর সেখানে লেগে থাকতে চাইবে না। এই অনিশ্চিত প্রেক্ষাপটে কোনো মানুষই চাইবে না কৃষিতে জীবন পরিচালিত হোক। তা হলে কি দিন দিন কমে আসবে কৃষিমাত্রা। কৃষিকাজে নানা প্রতিবন্ধকতা কৃষককে কৃষি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কৃষিজীবী সোনালি কারিগরকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। কৃষকদের দিতে হবে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা।

লেখক : কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close