দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ১৭ জুন, ২০১৯

প্রত্যাশা

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাই

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত সপ্তম অংশীদারিত্ব সংলাপে মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারেও দুই দেশের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশে এক বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। মিয়ানমার মুখে তাদের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার কথা বললেও এজন্য যথোপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় রোহিঙ্গারা ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরতে রাজি হচ্ছেন না। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সে দেশের আদৌ আগ্রহ আছে কিনা তা নিয়ে এরই মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে চায়। যে কারণে তারা মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তিতেও আবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের কথা ও কাজে মিল না থাকায় রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন জটিল হয়ে উঠছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের দুই বড় প্রতিবেশী ভারত ও চীন এ ইস্যুতে ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতি গ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উভয় দেশ নীতিগত সমর্থনের কথা জানালেও মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের যে অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত সে বিষয়টিও হিসাবে রাখছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনই বাংলাদেশের জন্য ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ওয়াশিংটনের সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নিছক এই সমর্থনে সন্তুষ্ট থাকার অবকাশ নেই। ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার কারণেই দুই প্রতিবেশী বন্ধুদেশ চীন ও ভারতকে আরো সক্রিয় করা এখন বাংলাদেশের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আশা করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফরকালে এ বিষয়ে বেইজিংয়ের সমর্থন পাওয়া যাবে। ভারতের সমর্থন পেতেও সরকারকে সক্রিয় হতে হবে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশকে ১১ লাখের বেশি বিদেশি নাগরিকের বোঝা থেকে পরিত্রাণ দিতে চীন ও ভারত সহায়তার হাত বাড়াবে। এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধান সবারই কাম্য হওয়া উচিত। বন্ধুত্বের স্বার্থেই তারা এ ব্যাপারে সুমতি ও সুবিবেচনার পরিচয় দেবেনÑ এমনটিই প্রত্যাশিত।

বাংলাদেশে ১১ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রিত। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল রাষ্ট্রকে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করাও অত্যন্ত কঠিন। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা থাকলেও মোটা দাগে বাংলাদেশকেই ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গারা এ দেশে আশ্রিত থাকায় নানামুখী চাপে আছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রসহ নানা স্তরে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, স্থানীয়ভাবে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এর আগে রোহিঙ্গা আশ্রিত এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটেছে, যার সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িত বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করেছিল। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা সার্বিকভাবে বাংলাদেশের জন্য কতটা ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিতি হয়েছে তা স্পষ্ট। আমরা মনে করি, এ অবস্থার সুষ্ঠু সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া অপরিহার্য।

সর্বোপরি বলতে চাই, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো, যা ইচ্ছা তাই করবে এটা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয়কালীন রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থাও করতে হবে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থেকে সংকট মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি পূরণে এখন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশকেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এর জন্য কূটনীতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

সাধারণ সম্পাদক

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close