দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ২৭ মে, ২০১৯

মুক্তমত

ফুটপাত দখলমুক্ত হওয়া জরুরি

যানজট রাজধানীর একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ঈদ সামনে রেখে রোজার মাসে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর অন্যতম প্রধান কারণ ফুটপাত দখল এবং যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের ঘটনা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফুটপাত-রাস্তা দখলমুক্ত করার জন্য বারবার অভিযান চালালেও চাঁদাবাজরা তা ব্যর্থ করে দিচ্ছে। তারা হকারদের উসকে দিচ্ছে নিজেদের স্বার্থে। রাস্তা বা ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বসানো অবৈধ। এ অবৈধ কর্মকান্ডে যারা লিপ্ত তাদের প্রতি সিটি করপোরেশনের কোনো দায় থাকার প্রশ্ন অবান্তর। একই সঙ্গে হকারদের রাজধানীর নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু কোনো অবস্থায় রাস্তা বা ফুটপাত অবরুদ্ধ করার সুযোগ দেওয়া যায় না।

যানজটে অচল রাজধানীকে সচল করতে রাস্তা দখলের প্রক্রিয়াকে শক্ত হাতে রুখতে হবে। যারা সাধারণ মানুষের চলাচলের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, তাদের প্রতি কোনো সহানুভূতি থাকাই উচিত নয়। এ ব্যাপারে সরকার কতটা সফল হবে, তার ওপর রাজধানীর যানজট সমস্যার সমাধানের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভরশীল। ঢাকার যানজট এখন সংশ্লিষ্ট সবারই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীতে ছোট গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। অ্যাপভিত্তিক সেবার সঙ্গে বেড়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। মেট্রোরেলের কাজ চলায় রাজধানীর অনেক প্রধান সড়কই সংকুচিত হয়ে গেছে। অন্যদিকে সড়কের যানজট নিরসনসহ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ১৪ বছর আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা সুপারিশগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ঢাকার রাস্তার কোনো উন্নতি হয়নি। যানজটের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ বলছে, ঢাকায় এখন ২৫ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে ৬৩ মিনিট। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক ট্রাফিক ইনডেক্স অনুযায়ী বিশ্বের ২০৭টি শহরের মধ্যে যানজটে শীর্ষে আছে ঢাকা। সরকারি হিসাবে যানজট নিরসনে গত ১০ বছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পে ব্যয় না করে এই টাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু করতে পারলে যানজট নিরসনে অনেক বেশি সুফল মিলত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বা এসটিপিতে প্রাধিকারভুক্ত সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল ঢাকার ফুটপাত যাত্রীবান্ধব করা, ৫০টি সংযোগ সড়ক তৈরি করা, কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিচালনা করা। কোনোটিই সময়মতো হয়নি। কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিচালনার কাজ এখনো চলছে। আবার ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থাপনার ৩২টি সংস্থার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।

অন্যদিকে রাস্তার শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বৃত্তাকার নৌপথ চালু করা, পার্কিং নীতিমালা প্রণয়ন ও মেট্রোরেল চালুর বিষয়ও আলোচিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের পর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। অর্থ খরচও হয়েছে। তাতে কোনো ফল লাভ হয়নি; বরং যাত্রীসাধারণের দুর্দশা বেড়েছে।

ঢাকার যানজট কমাতে ও যাত্রীসেবার মান বাড়াতে রুট ধরে ধরে কোম্পানিভিত্তিক বাস চালুর কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে বিআরটিসির বাস আরো বেশি পরিমাণে ঢাকার রাস্তায়, ক্রমান্বয়ে সব রুটে চালু করার বিষয়টি ভাবতে হবে। তাতে হয়তো বেসরকারি বাস মালিকদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমবে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অবশ্যই আধুনিক করতে হবে। রাস্তায় পার্কিং বন্ধ করাসহ নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামা ও যাত্রী ওঠা-নামানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে ঢাকার যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা যাত্রীবান্ধব করতে না পারলে অচিরেই মহানগরী যন্ত্রণার নগরীতে পরিণত হবে। বিষয়টি মাথায় রেখে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা নতুন করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করতে হবে। অন্যথায় যানজট থেকে কোনোভাবেই রেহাই মিলবে না। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ভাববেন।

লেখক : সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close