reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ মে, ২০১৯

কৃষক বাঁচাতে শুভ সিদ্ধান্ত

অনেক দেরিতে হলেও সরকারের এ সিদ্ধান্ত সময়ের দাবিকে পূরণ করল। চাল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে বিদ্যমান ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ শুল্ককে ২৫ শতাংশে উন্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়করও আরোপ করা হয়েছে। ফলে চাল আমদানির ক্ষেত্রে মোট করভার হলো ৫৫ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে (১০ মাসে) প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে। আর এই আমদানি দেশে উৎপাদিত চালের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের উৎপাদন মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই সঠিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত বলেছেন অনেকেই। স্বাগত জানিয়েই বিশ্লেষকরা বলেছেন, সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা কালক্ষেপণ হয়েছে। সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি কৃষককুলকে এরই মধ্যে বেশ কিছুটা খেসারত দিতে হয়েছে। বিশেষ করে সরকারের চাল ক্রয়ের শ্লথগতি খেসারতের ক্ষেত্রে ক্যাটালিস্টের ভূমিকা পালন করেছে।

এবারে চালের উৎপাদন বেশ ভালো। তবে ২০১৭ সালের মে মাসে হাওরে আগাম বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির পর সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক রহিত করে। সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ক্ষতির ফলে ১০ লাখ টন চালের ঘাটতি হবে। তবে কোনো অজ্ঞাত কারণ বা যুক্তিতে ১০ লাখ টনের ঘাটতি পূরণ করার কথা বলে গত দুই বছরে দেশে ৬০ লাখ টন চাল আমদানি করা হলো! এ প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি। এ অবস্থায় গত বছরের নভেম্বরে সরকার চাল আমদানিতে সর্বসাকুল্যে ২৮ শতাংশ শুল্কারোপ করে। এতে আমদানি কমলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। কথায় বলে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ে দশ ফোঁড়। চাল আমদানির ক্ষেত্রে যেন সে চিত্রই ফুটে উঠেছে। এ দেশে সিদ্ধান্ত আসে সময় পেরিয়ে গেলে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ফি বছরই দুর্ভোগ আমাদের তাড়া করে ফিরবে।

পাশাপাশি একটি কথা না বললেই নয়, সব সমস্যার সমাধান যেন দেশের প্রধান নির্বাহীর ওপরে ন্যস্ত করে রাখা হয়েছে। যদি তাই হয়, তা হলে নির্দিষ্ট প্রতিটি ক্ষেত্রে এত অর্থের জোগান দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী রাখার প্রয়োজন কোথায়! যারা প্রয়োজনের সময় কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখাতে অক্ষম, তাদের সেই পদে বহাল রেখে রাষ্ট্রের অপচয় রোধ আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা জানি, একটি কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকের ওপরই নির্ভর করে গতিশীল হয় অর্থনীতির চাকা। রাজনীতিকদের মুখে প্রায়শই উচ্চারিত হয়, ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’। মুখে বলতে শোনা গেলেও কখনো বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়নি। সম্ভবত এই প্রথম সে রকম একটি সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ। আমরা মনে করি, একইভাবে আখচাষি ও চিনিশিল্পকে রক্ষার জন্য একই ধরনের সিদ্ধান্ত আসা দরকার। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এ ক্ষেত্রেও সহানুভূতিশীল হবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close