দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ১৫ মে, ২০১৯

মুক্তমত

দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই কৌশল

ঘূর্ণিঝড় ফণীর ছোবলে ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারে নেওয়া হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ। হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারেও জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে পদক্ষেপ। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ২২ হাজার একর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর অনুষঙ্গ হয়ে জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানায় উপকূলভাগের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

স্মর্তব্য গত শনিবার ভোরে খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট উপকূল হয়ে দুর্বল হয়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর আগে শুক্রবার প্রচন্ড এ ঘূর্ণিঝড় ভারতের ওড়িশা রাজ্যে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ঘর বিধ্বস্ত হয়ে গাছচাপা পড়ে, বজ্রপাতে ও পানিতে ডুবে বাংলাদেশে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বগী এলাকার প্রায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ তছনছ হয়ে গেছে। পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১০টি গ্রাম তলিয়ে আছে। ফণীর প্রভাবে কচা, পানগুছি নদী ও বলেশ্বর নদের পানি ৩ থেকে ৫ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়।

সরকারি হিসাবে, ফণীর কারণে সারা দেশে ২২ হাজার ৩৪৫ একর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৫৯টি ঘর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ২৩৮টি বসতঘর। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকরা এসব প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ পাঠিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতে প্রবল বেগে আঘাত হানলেও প্রাণহানির দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে। জনসচেতনতার অভাবেই এটি ঘটেছে। আমরা আশা করব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে ফাঁকফোকর রয়েছে, তা বন্ধে অতিদ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গড়ে তোলা হবে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার টেকসই কৌশল।

তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে, সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণের কারণে ঘূর্ণিঝড় ফণী যতটা ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল ততটা পারেনি। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম কক্সবাজারসহ উপকূল অঞ্চলের মানুষ ও গবাদিপশুর হাজার হাজার লাশের গন্ধে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। সত্তরের প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়ের চেয়েও ফণীর দাপট ছিল বেশি। তবে ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড় ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিম বাংলায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানায় তার গতি অনেকটাই হ্রাস পায়।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর ভয়াবহ আঘাত হানার পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল, যেটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারের পক্ষ থেকে এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ফণীর যে মাত্রায় আঘাত হানার ও ক্ষয়ক্ষতির যে আশঙ্কা ছিল, সেটা হয়নি। তার পরও যে পরিবারের যতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ফণী মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ১৯টি জেলার প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছিল। সরকারি সফরে লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিকভাবে দেশের খোঁজখবর রাখেন।

ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো সত্যিকার অর্থেই অসম্ভব। তবে দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে দুর্যোগ প্রতিরোধের টেকসই ব্যবস্থা। সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ বছরের শাসনামলে সব দিক দিয়ে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার ফলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

লেখক : সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close