এস এম নাজের হোসাইন

  ১৩ মে, ২০১৯

মুক্তমত

ভোক্তাকেই রুখতে হবে মূল্যবৃদ্ধি

রমজান মাস উপলক্ষে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রমজানের ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী এবং বড়দিন উপলক্ষে ইউরোপে ও আমেরিকার দেশগুলোতে পণ্যসামগ্রীর বাজারে বিশাল মূল্যহ্রাস প্রথা চালু আছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতেও পূজার সময় মূল্যহ্রাসসহ নানা প্রথা চলমান আছে। কিন্তু আমাদের দেশে পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টো। সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের প্রতি দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু কতটা কার্যকর হয়, সেটা দেখার বিষয়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেই আমরা প্রায়শ সরকারকে দোষারোপ করে থাকি। এটি ঠিক যে, সরকারের যথাযথ মনিটরিংয়ের দুর্বলতার সুযোগে বা নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিদের খামখেয়ালিপনার কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে চলে। একশ্রেণির নীতি আদর্শহীন, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো পণ্যদ্রব্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও দাম বাড়িয়ে দেন। যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ালেও ওই পণ্যের আন্তর্জাতিক মূল্য কমলেও তারা আর কমান না। আবার যখনই কোনো পণ্যের দাম বাড়ে, তখনই সাধারণ জনগণও সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েন, দাম বাড়ার গুজবে নিজেরাই ওই পণ্যের মজুদে তৎপর হয়ে ওঠে। ফলে সংকট আরো ঘনীভূত হয়।

পৃথিবীর সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ভোক্তারাই পণ্যের প্রধান নিয়ামক। কারণ ভোক্তারা পণ্যটি ব্যবহার করলেই উৎপাদক, শ্রমিক, আমদানিকারক ও খুচরা-পাইকারি বিক্রেতারা লাভবান হবেন। সে কারণে উন্নত দেশগুলোতে ভোক্তাদের বলা হয় ‘ক্রেতা সম্রাট’। আর উৎপাদক ও আমদানিকারকরা সব সময় ভোক্তাদের পছন্দ-অপছন্দের কথা মাথায় রেখে পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে পরিস্থিতি তার উল্টো। ক্যাবের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা ফল, মাংস ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য আমদানিতে কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাজারে আসছে। ভোক্তা হিসেবে এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আমাদের কি কোনো দায়িত্বই নেই?

রমজান মাস উপলক্ষে ক্যাব থেকে সম্মানিত ক্রেতা-ভোক্তাদের কাছে আমাদের আবেদন, দয়াকরে একজন ক্রেতা-ভোক্তা হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো সম্পর্কে সচেতন হই। একই সঙ্গে একসঙ্গে মাসের বাজার না কিনে সপ্তাহের জন্য সপ্তাহে কিনি। পণ্য ক্রয় করার সময় দাম ও পণ্যের মান যাচাই-বাছাই করে কিনি। কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা কেনা ও মজুদের জন্য হন্যে হয়ে না পড়ে আগে খোঁজখবর নিই, প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে অন্য পণ্য কিনি এবং ওই পণ্যটির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হই। সরকারেরও উচিত এসব ভোগ্যপণ্য আমদানির ভার এককভাবে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর হাতে ছেড়ে না দিয়ে মনোপলি ব্যবসা বন্ধ করা। একই সঙ্গে সব কিছুর জন্য কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের ওপর নির্ভর না হয়ে অন্য দেশগুলোর ওপরও গুরুত্বারোপ করা। এ ছাড়াও যারা বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন, তাদের বাজারজাতকৃত পণ্য বয়কট ও তাদেরও সামাজিকভাবে বয়কট করি। বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য ব্যবহার বাদ দিয়ে দেশীয় পণ্য কিনি। আমদানি করা পণ্যের বদলে স্থানীয় পণ্য ব্যবহার করে দেশকে অন্য দেশের পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করি। তা হলে দেশের অর্থ দেশে থাকবে, দেশীয় কর্মসংস্থান বাড়বে এবং জাতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।

লেখক : ভাইস প্রেসিডেন্ট

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close