reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ মে, ২০১৯

মানবিক বৈকল্যের উৎসে যেতে হবে

আমাদের সমাজটাকে যদি একটি ইলিশের রূপক হিসেবে ধরা হয়, তা হলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মাছের লেজ থেকে মাথা পর্যন্ত পচনের আওতায় এসেছে। এ দেশে এমন কোনো খাদ্যপণ্য নেই যে, তা ভেজাল বা বিষমুক্ত। জাহান্নামের দরোজা খুলে লাভার স্রোতের মতো নেমে আসছে মানবিক বৈকল্যের জিন। প্রবাহিত হচ্ছে রক্তের শ্বেত ও লোহিত কনিকায়। সম্ভবত ব্লাড ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। দেশের বহুল প্রচলিত একটি প্রবচন বলছে, ‘মাছের মাথা পচলে সবটাই পচে যায়’। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে সমাজ বিদ্যমান রয়েছে, তার পচন ধরেছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত। হাইকোর্টে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদন সে কথাই বলছে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাঁচা তরল দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯৩টিতে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। অণুজৈবিক বিশ্লেষণ তথ্য মতে, ৯৩ নমুনাতে টিপিসি ও কলিফরম কাউন্ট ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান। এছাড়া একটি নমুনায় সালমোনেলার উপস্থিতিও পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে পানিতেও। ভেজালেও ভেজাল হচ্ছে যে দেশে, সে দেশে বার্তা কতটা অর্থবহ হবে, এ আশঙ্কা থেকেই যায়। দুধ ও পানির মান রক্ষায় গত বুধবার কঠোর বার্তা দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশনামায় বলা হয়, দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

একদিকে ভেজালের অপ্রতিরোধ্য চলাচল, পাশাপাশি বিষমিশ্রিত খাদ্যপণ্য এবং পরিশেষে অনৈতিক মুনাফালোভীদের একচেটিয়া দখলে পণ্যের বাজার। বাজারে গিয়েও ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। কোনো পণ্যকেই ছোঁয়া যাচ্ছে না। দাম চড়া! বাজার মনিটরিং যে নেই, তাও নয়। তবে সে মনিটরিংয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। বাড়তি দামে বিক্রির অভিযোগ সর্বত্র। রোজায় গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয় ৫২৫ টাকায়। কিন্তু দেশের কোথাও এই দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে না। ছোলা ও সব ধরনের ডালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। পেঁয়াজ রসুন আদার কথা নাইবা বললাম। বলে লাভইবা কী! কোনো লাভ নেই। ভেজালের দেশে এর বেশি আশা করাটাই যুক্তিযুক্ত নয়। তাই হতাশবাদীরা প্রায়শই বলে থাকেন, ‘যেভাবে চলছে, চলতে দাও না বাপু। নড়াচড়া করলে হিতে বিপরীত হতে পারে, ভেজালের মাত্রা আরো বাড়তে পারে। তখন নীলকণ্ঠ হওয়া ছাড়া বাঁচার আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।’

আমরা তো হতাশবাদী নই। আমরা হাইকোর্টের নির্দেশনার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলতে চাই, দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেøা-পয়জনিংয়ের মধ্য দিয়ে গোটা জাতিকে যারা হত্যার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত তাদের প্রতি কোনো ধরনের অনুকম্পা নয়। এরা গণহত্যার পরিকল্পনাকারী এবং বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং এদের শাস্তিও সে রকম হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটাই জাতির প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close