শেখ আনোয়ার

  ০৯ মে, ২০১৯

মুক্তমত

শব্দ যখন ভয়ংকর

শব্দদূষণ বলতে মানুষের বা কোনো প্রাণীর শ্রুতিসীমা অতিক্রমকারী শব্দ সৃষ্টির কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বোঝায়। যানজট, কল-কারখানা থেকে দূষণ সৃষ্টিকারী এ রকম তীব্র শব্দের উৎপত্তি হয়ে থাকে। বিমানের প্রচন্ড আওয়াজের ফলে বিমানবন্দর এলাকার আশপাশে ব্যাপক শব্দদূষণগত পরিবেশের সৃষ্টি করে। শব্দের একককে বলে ডেসিবল। সংক্ষেপে ডিবি। ৮৫ ডিবি শব্দ আমাদের কানের জন্য নিরাপদ। গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষ সাধারণত ২০-২০ হাজার হার্জের কম বা বেশি শব্দ শুনতে পারে না। মানুষের কান যেকোনো শব্দের ব্যাপারে যথেষ্ট সংবেদী। তাই তীব্র শব্দ কানের পর্দাতে বেশ জোরে ধাক্কা দেয়, যা কানের পর্দাকে নষ্টও করে দিতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হয়ে থাকে। শব্দদূষণের কারণে মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচার-আচরণ সব ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। এ ছাড়া শব্দদূষণের কারণে দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চরক্তচাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাতসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। ঢাকা শহরে অসহনীয় শব্দের সঙ্গে আমরা বসবাস করছি। রাস্তায় নামলে গাড়ি, মোটরসাইকেল আর নানা ধরনের যানবাহনের শব্দে মানুষের দিশাহারা জাগে মনে। আবাসিক-অনাবাসিক এলাকা, অফিসপাড়া, বিপণিবিতান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি হাসপাতালের আশপাশেও শব্দদূষণের তীব্রতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যা জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাই শব্দদূষণের মতো মারাত্মক ঘাতক সম্পর্কে সর্বসাধারণের সচেতন হওয়া জরুরি প্রয়োজন।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন : ২০০৬ সালের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী, কোথাও কোনো হাসপাতাল থাকলে সেটি ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর ‘নীরব এলাকায় চলাচল করার সময় যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না’। বিধি অনুযায়ী, নীরব এলাকায় হর্ন বাজালে প্রথমে এক মাসের কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। আবার নিয়ম ভাঙলে ছয় মাসের কারাদন্ড বা জরিমানা হওয়ার কথা। কিন্তু আইনের এই প্রয়োগ হয় না বললেই চলে। পরিবেশ অধিদফতর তাদের সাম্প্রতিক জরিপে আটটি বিভাগীয় শহরের ২০৬টি স্থানের শব্দ পরিমাপ করে। এই স্থানগুলোতে ১৩০ ডেসিবেল পর্যন্ত আকস্মিক শব্দের মাত্রা রেকর্ড করা হয়। কোনো কোনো স্থানে মাত্র ১০ মিনিটে ৯০০ বারের অধিক হর্ন বাজতে দেখা যায়। অতিরিক্ত হর্ন বাজানো এসব স্থানে যারা বসবাস করছে, তারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে যে আইন ও বিধি রয়েছে, তা নিয়ে দুয়েক বছর পরপর প্রচারণা চলে মাত্র। তবে কয়েক দিন চলার পর সব ঝিমিয়ে পড়ে।

শব্দদূষণ এড়াতে বাস্তব কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এক জোড়া ইয়ার প্লাগ কিনতে পারেন। পকেটে ইয়ার প্লাগ রাখুন। অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নিন। মনে রাখবেন উচ্চশব্দ এড়াতে ফোম সিলিকন, মোমÑ এসব কোনো কাজে লাগে না। আর হ্যাঁ। কানে কখনো তুলা দেবেন না। তুলা শব্দ প্রতিরোধ করে না। যদি প্লাগ ব্যবহার করেও বাড়তি শব্দ নিয়ন্ত্রণ না হয়, তা হলে আপনার কান দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখান, পরীক্ষা করান।

এ ছাড়া যেখানে উচ্চশব্দ হচ্ছে, সেখান থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ান। স্টেডিয়ামে হইচইয়ের মধ্যে খেলা দেখলেন ভালো কথা। বাসায় এসে অমনি মিউজিক

শুনবেন না। মাঝখানে বিরতি দেবেন। মনে রাখবেন, কান একবার বধির হলে

কোনোমতেই ঠিকঠাকমতো আর ফিরে পাওয়া যায় না। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন শ্রবণযন্ত্র খুব একটি কাজ দেয় না। তাই প্রয়োজনে যখনই অডিও শুনবেন, ভলিউম অ্যাডজাস্ট করে শুনুন।

লেখক : শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close