শহিদ রাসেল

  ০৭ মে, ২০১৯

মুক্তমত

যোগ্যতার ভিত্তিতে জীবিকা নির্ধারণ

সমাজের অসংগতি তুলে ধরা গণমাধ্যমের প্রধানতম দায়িত্ব। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক কর্মবাজারে সম্পর্ক সূত্রে চাকরি পাওয়ার অহরহ দৃষ্টান্ত রয়েছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি সমাজের গভীরে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। যার যোগ্যতা যতটুকু তার জীবিকাও ততটুকু। জীবনের মূল চালিকাশক্তি হলো উপভোগ্য ও সম্মানিত জীবিকা। আর এ জীবিকা কখনো অন্যের দ্বারা পুরস্কৃত হতে পারে না, এটি ব্যক্তিকে অর্জন করে নিতে হয়। অন্য কেউ আপনাকে ক্ষণিকের সুখ-তৃপ্তি দিলেও তা স্থায়ী হয় না। সময়ের কঠিনতম পরীক্ষায় ব্যক্তিত্বহীন ও অযোগ্য লোকরা টিকে থাকতে পারে না, মূল স্রোতের সঙ্গে ভারসাম্যহীনতায় ঠিকই তারা ছিটকে পড়েন। কেউ চাইলেই যেমন আপনাকে সুখী জীবন উপহার দিতে পারেন না, ঠিক তেমনি ব্যক্তির ভেতর নিজস্ব কোনো প্রতিভা-প্রচেষ্টা না থাকলে হাজারো সহযোগিতার হাত তাকে বাঁচাতে পারে না। আপনাকে চলার পথ দেখিয়ে দেওয়া বা মূলমন্ত্র শিখিয়ে দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু শক্ত হাঁটা তথা উপস্থিত বুদ্ধিতায় বিপদের মোকাবিলা করার বিষয়টি স্বীয় যোগ্যতানির্ভর।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত সনদগুলো আপনাকে চাকরির নিশ্চয়তা দিতে পারে না। আবার কারো সুপারিশে বা ঘুষের লেনদেনে চাকরি পাওয়া গেলেও তা টিকিয়ে রাখার দায়টা কেবলই চাকরিপ্রার্থীর। সুপারিশকারী বা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা (ঘুষ গ্রহণকারী) বেকারদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা ছড়িয়ে দেয়। ফলে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা ও সংশয় বিরাজ করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের বর্তমান কার্যক্রম বেশ প্রশংসনীয়। সম্প্রতি তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। হোক তা অনেক ছোট পরিসরে, তবু অন্য সব দুর্নীতিবাজের মধ্যে একটা ভয় বা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ধরনের অভিযানের আওতা বাড়ানো হোক এবং কঠোর ব্যবস্থা বাস্তবায়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। তবেই মানুষের মনে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ^াস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

অনেক দুর্বল মানসিকতার চাকরিজীবী চাকরি হারানোর ভয়ে সব ধরনের অনিয়ম মুখবুজে সহ্য করেন, অন্য চাকরিজীবীদেরও অন্যায় মেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন, এমনকি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতনকে সন্তুষ্ট করতে সাদাকে কালো বা তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার বনে যান। অথচ পরিতাপের বিষয় তিনি একটিবারের জন্য কর্মফল চিন্তা করেন না, ভবিষ্যতের জবাবদিহিতায় কখনো বিচলিত হন না। কথায় আছেÑ ‘পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না’। এসব প্রবাদে অনেকের বিশ^াস নেই, তবু এগুলোকে অর্থহীন ভাবা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের জন্য একটা সময় অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।

ক্ষমতার দাপটে অযোগ্য লোককে পদায়নের মাশুলও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এক দিন দিতে হবে। ক্ষমতা ও প্রভাব চিরস্থায়ী নয়। বিশেষ করে বেসরকারি প্রেক্ষাপটে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণের ভোগান্তি অবর্ণনীয়। এখানে সবকিছু দুর্বৃত্তদের দখলে, সিন্ডিকেট না বুঝলে এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের কাজই ঠিকমতো সম্পন্ন হয় না। আর এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে যার আছেন, তারা এক একজন মুখোশধারী ভন্ড, বকধার্মিক। তারা মুখে যা বলেন, তা মনে ধারণ করেন না। আবার যা কিছু করেন, তা বিশ^াস করেন না। একটা বিকৃত মানসিকতা তাদের চালিত করে। লাখ লাখ সাধারণ চাকরিজীবী তাদের সূক্ষ্মতম চক্রান্তের শিকার হয়ে করুণতম জীবন বেছে নিয়েছেন।

তবু হতাশ হলে চলবে না, ব্যক্তির নিজ যোগ্যতা বলে ঠিকই সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ সম্ভব। একজন নীতিবান, সৎ ও যোগ্যতম ব্যক্তিত্ব কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করেন না, হয়তো পরিস্থিতির চাপে নীরব বা নির্বাক থাকেন। কিন্তু স্বীয় নৈতিক শক্তিতে এক দিন সমাজকে আলোর পথ দেখান। সেই বহুল প্রতীক্ষিত সূর্যের আগমন সব অমানিশাকে ধ্বংস করে সত্য ও সুন্দরের আদর্শ বাস্তবায়িত হবেÑ এই প্রত্যাশায়।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close