reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ মে, ২০১৯

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্য

বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বলা হয়। প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে এ দেশে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতো ভয়ংকর দুর্যোগগুলো আছড়ে পড়ে দেশের ওপর। ফলে প্রতি বছর ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ-এপিল-জুন এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত আনে। দেশে বর্তমান দুর্যোগের সময়। তাই সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। দুর্যোগ মোকাবিলায়

পূর্ব প্রস্তুতি ক্ষয়ক্ষতি কমায়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোধে মানুষের হাত নেই। কিন্তু দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ-পরবর্তী বিভিন্ন প্রস্তুতি প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমায়। বাংলাদেশে অতীতের তুলনায় দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমেছে। বর্তমানে ‘ফণী’ নামের একটি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে; যা এরই মধ্যে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিম বাংলায় আঘাত হেনে বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকেছে। তবে এবারের আঘাত প্রথম দিকে যতটা প্রবল হওয়ার কথা ছিল, পরে তা ততটা সবল হবে না বলেই জানানো হয়। সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আমাদেরও উচিত সরকারকে সহায়তা করা। বাংলাদেশে শেষ ঘূর্ণিঝড় ফেথাই আংশিক আঘাত করেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পুরোদমে আছড়ে পড়ে ঝড়টি। যার প্রভাবে প্রায় তিন-চার দিন ভারী বৃষ্টির কবলে পড়ে বাংলাদেশ। নভেম্বরে গাজা ও অক্টোবরে তিতলি নামের দুটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। তবে এই ঝড়গুলোর তেমন প্রভাব পড়েনি বাংলাদেশে। ২০১৭ সালের ৩০ মে ভোর ৪টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন এলাকা অতিক্রম করতে শুরু করে। এসব এলাকায় তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় কাঁচাবাড়ি, ফসল, গাছপালা নষ্ট হয় এবং পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। সর্বশেষ যে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে তার নাম ‘সিডর’। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের ৩০টির মতো জেলায় সিডর আঘাত হানে; যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২০ লাখ পরিবার। নিহত হয় ৩ হাজার ১৯৯ জন। বাংলাদেশের ইতিহাসে যেটি ভয়াবহ এক ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচিত হয়। সিডরের কারণে প্রায় ২ হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়ে যায়, যাদের আজও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

সিডরের পর আইলা, রেশমি, মহাসেনের মতো ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে। বর্তমানে ফণী নামের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় দেশে আঘাত আনার অপেক্ষায় রয়েছে। ভারত হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সারা দেশে বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর আক্রমণ থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে কক্সবাজারে ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হবে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪৩ জন মানুষের। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষও। কোনো প্রাণহানি যেন না ঘটে, এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে সরকার।

ফণী ৪০ বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়কে হার মানাবে ফণী। ১৯৯১ সালে মেরি ইন নামের প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়ে মারা যায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় সব কিছু। এমন একটি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সেদিন আমরা সাফল্য দেখাতে না পারলেও আজ সে ক্ষমতা অর্জন করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এ দেশের মানুষ আজ অনেকটাই সচেতন। আর সরকার এরই মধ্যে এ দুর্যোগ মোকাবিলায় যে প্রস্তুতি দরকার তা সম্পন্ন করেছে। আমরা ফণীর মতো যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারি। সরকারের ইতিবাচক ভূমিকায় আমরা সে যোগ্যতা অর্জন করেছি বলেই আমাদের বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close