reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ এপ্রিল, ২০১৯

নজরদারি বাড়ানো হোক রোহিঙ্গাদের ওপর

এ দেশ লালনের। এ দেশ হাছনের। বারো আউলিয়ার পদচারণে পবিত্র এ ভূমি। আমাদের রক্তের মধ্যে ঝরনাধারার মতো প্রবাহিত মানবতার মর্মবাণী। আর সে কারণেই আমরা অবলীলায় আশ্রয় দিতে পেরেছি ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত ভিনদেশি মানুষকে। মিয়ানমার সেনা নিপীড়ন ও নির্যাতন থেকে প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালের আগস্টে এ দেশে পালিয়ে আসে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। আমরা শুধু আশ্রয়ই দিয়ে বসে থাকিনি। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসাসেবাসহ আরো কিছু করার চেষ্টাও করেছি এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। বিশ্ববাসী এ ব্যাপারে আমাদের প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেনি। কার্পণ্য করেনি সহযোগিতার হাত বাড়াতে। সরকারের তরফ থেকে তাদের দেশে (মিয়ানমার) ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে চেষ্টার ত্রুটি করেনি। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু আশার কোনো আলো পরিলক্ষিত হচ্ছে না মিয়ানমার সরকার এবং সেনাবাহিনীর উগ্র এবং মিথ্যা আচরণের কারণে।

সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা থাকবেÑ এ ধারণা সবার। কিন্তু চলমান এ সমস্যার পাশাপাশি নতুন করে আরো এক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে নারী-পুরুষ মিলে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। অথচ উখিয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা ২ লাখ। এমতাবস্থায় সংখ্যাগত দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের দল ভারী হওয়ায় তারা বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এরই মধ্যে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে। এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ছোট ছোট অসংখ্য বসতি। প্রায় প্রতিটি ঘরেই একটি দোকান। যেখানে মোবাইল, এলকট্রনিকস, কাপড়, ডিপার্টটমেন্টাল থেকে শুরু করে নামিদামি রকমারি স্টোরসহ রয়েছে স্বর্ণের দোকানও। রয়েছে পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ওষুধের দোকান। এদের লেনদেনও ভালো। বলতে গেলে এরা এখন ভালোই আছে। তবে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। আশ্রয়দাতারা এখন আশ্রয়হীনতায় ভুগছেন। তাদের এত দিনকার ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। পাশাপাশি জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ছে। ১১ লাখ মানুষের চাপে এখন তারা অনেকটা দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কাছাকাছি পৌঁছেছেন। বিষয়টি এখন তাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে একটি অশনিসংকেত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আরো একটি সংবাদ পুরো দেশকে কিছুটা হলেও ভাবিয়ে তুলেছে। রোহিঙ্গা সংকট ঘিরে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। সংঘাতের আগাম পূর্বাভাস ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তঃদেশীয় সংস্থার এশিয়াবিষয়ক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার মিয়ানমারে ফেরার সম্ভাবনা কম। এমন প্রেক্ষাপটে আশ্রয় শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সামলানোই বাংলাদেশের জন্য হতে যাচ্ছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আইসিজি বলেছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। শিবিরগুলোয় জঙ্গিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী ধরাছোঁয়ার বাইরে এবং বেপরোয়াভাবে ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশকে সতর্ক করে আইসিজি বলেছে, এসব ইস্যু এখনই নিষ্পত্তি করতে না পারলে তা দীর্ঘ মেয়াদে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে। সম্ভবত এটি বাংলাদেশের এই অংশে অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতাকে উসকে দেবে।

আমরা মনে করি, কোনো ধরনের অবহেলা না করে বিষয়টির প্রতি সরকার জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখার পাশাপাশি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close