reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ এপ্রিল, ২০১৯

বুড়ি তিস্তায় খনন সুফলে সংশয়

খননকার্যে বরাদ্দ ১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। গত মাস থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা এবং বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনই প্রকল্পের লক্ষ্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢাললে গাছের কোনো উপকারে আসে না। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে অনেকটা সে রকমই হয়েছে। পানিপ্রবাহের উৎসমুখে বাঁধ রেখে ভাটিতে চলছে খনন কার্যক্রম। এতে কতটুকু ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে, সে প্রশ্নে রয়েছে বিস্তর সংশয়। বাস্তবতা বলছে, উৎসমুখে বাঁধ দেওয়ার কারণেই নদীটি মূল তিস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। নতুন করে খননের পর যদি তিস্তার সঙ্গে পুনরায় যুক্ত করা না হয়, তা হলে শুষ্ক মৌসুমে বুড়ি তিস্তা আবারও যে শুকিয়ে মরা তিস্তায় পরিণত হবে; সে ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

তিস্তার এ শাখা নদী বুড়ি তিস্তা উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়ন ও দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে চিলমারী উপজেলার কচকল এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ১৯৮৮ সালের বন্যায় তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। সেসময় থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার গ্রামে বুড়ি তিস্তার উৎসমুখে সøুইসগেট ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বন্যা রোধে সেসময় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) একই স্থানে বাঁধ নির্মাণ করে। এতে বুড়ি তিস্তা মূল তিস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় নদীটির পানিপ্রবাহের অপমৃত্যু ঘটে। অপমৃত্যুর পর ভূমিদস্যুদের কবলে পড়ে নদীর জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। এরই মধ্যে অনেক অবৈধ স্থাপনাও গড়ে উঠেছে মৃত এ নদীর ওপর। পাউবো সূত্রমতে, গত ১৪ মার্চ থেকে নদীটির খননকাজ শুরু হয়। তবে প্রকল্পে শুধু খননের কথাই বলা হয়েছে। উৎসমুখের বাঁধ অপসারণের কোনো উল্লেখ নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বুড়ি তিস্তা খননের ফলে বর্ষাকালে উলিপুর ও চিলমারী উপজেলা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে, এ কথা সত্য। তবে মূল নদী তিস্তার সঙ্গে সংযোগের ব্যবস্থা করা না গেলে শুষ্ক মৌসুমে বুড়ি তিস্তা আবার শুকিয়ে যাবে। নদী স্বাভাবিক অবস্থানে না থাকলে এভাবে খনন করে তাকে আর কত দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব! একসময় এ নদীর অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার উৎসমুখের বাঁধ ভেঙে দেওয়া হলে বন্যার ঝুঁকিও থেকে যায়। তবে ওই স্থানে পুনরায় সøুইসগেট নির্মাণ করা হলে অথবা পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে উভয় দিক রক্ষা হতে পারে। বুড়ি তিস্তাও নদী হিসেবে বেঁচে থাকতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতামতের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আমরাও বলতে চাই, কেবল খননের মাঝেই বুড়ি তিস্তার কাজকে সীমাবদ্ধ না রেখে উৎসমুখে বাঁধের পরিবর্তে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গ্রহণই হবে উত্তম সিদ্ধান্ত। যে সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নদীটি তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে। আমরা তাকে মৃত না বলে যৌবনদীপ্ত বলে আখ্যায়িত করতে পারব। পাইকারি হারে নদী শুকিয়ে যাওয়ার মহামারি চলাকালীন সময়ে নিজ হাতে যেন আরেকটি নদীকে হত্যা না করে বাঁচিয়ে রাখার পথে এগিয়ে যাই। কর্তৃপক্ষের কাছে শুধু এটুকুই প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close