ডা. মনিলাল আইচ লিটু

  ২৪ এপ্রিল, ২০১৯

মতামত

কণ্ঠের প্রতি যত্নবান হন

প্রতি বছর ১৬ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হয় কণ্ঠ দিবস। ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলে প্রথম এবং ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় কণ্ঠ দিবস। ২০১৯ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় BE KIND WITH YOUR VOICE. কণ্ঠের ব্যবহার, যতœ, রোগের চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোই এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য।

কণ্ঠকে শুধু যোগাযোগের প্রধান উপায় ভাবলে ভুল হবে। বাক্যের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কণ্ঠের ওঠানামা আমাদের ব্যবহার করা শব্দের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কথা কী প্রভাব সৃষ্টি করবে, তার শতকরা ৩৮ ভাগ নির্ভর করে কণ্ঠের ওঠানামার ওপর। আর তাই দৈনন্দিন সাংসারিক বা কর্মক্ষেত্রে কথাবার্তার জন্য ভালো কণ্ঠের গুরুত্ব অনেক বেশি। পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারী মানুষের জন্য কণ্ঠই সবকিছু। পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারী বলতে আমরা বুঝি যাদের পেশার জন্য কণ্ঠ প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক যেমন : গায়ক, অভিনেতা, শিক্ষক, উকিল, ধারাভাষ্যকার, সেলসম্যান, কলসেন্টারের কর্মী ইত্যাদি। আমেরিকাতে শতকরা ২৯ ভাগ মানুষ জীবনে কোনো না কোনো সময় কণ্ঠের সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং এতে যে কর্মক্ষমতা নষ্ট হয় তার অর্থ মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। বছরে প্রতি ১৩ জনে ১ জন এ সমস্যায় পড়ে। বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ছেলেরা এ সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়।

আমেরিকাতে পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারীদের মাঝে এ বিষয়ে চালানো জরিপ অনুযায়ী শিক্ষকদের শতকরা ১১ ভাগ কণ্ঠের সমস্যায় ভুগছেন। শিক্ষক ছাড়া অন্য পেশার জন্য এ হার শতকরা ৬ দশমিক ২ ভাগ কণ্ঠের সমস্যায় চাকরি হারিয়েছেনÑ এমন সংখ্যা শিক্ষক শতকরা ২০ ভাগ এবং অন্য পেশাজীবী ৪ ভাগ। অন্যান্য জরিপে দেখা যায় যে, শতকরা ৪৬ দশমিক শূন্য ৯ ভাগ কণ্ঠশিল্পী, শতকরা ৪৫ ভাগ কলসেন্টারের কর্মী কণ্ঠের সমস্যার কারণে কর্মক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

কণ্ঠের যতেœ কিছু উপদেশ : ১. সবার আগে দরকার সচেতনতা। অনেকেই জানেন না যে তাদের পেশার জন্য সুস্থ ও সুন্দর কণ্ঠ কতটা জরুরি। ২. নিজের কণ্ঠ নিজে শুনতে হবে, যেন কোনো সমস্যা তাড়াতাড়ি আন্দাজ করা যায়। সমস্যা ৩ সপ্তাহের বেশি থাকলে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ৩. আর্দ্রতা কণ্ঠের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি, তাই প্রতিদিন অন্তত ২ লিটার পানি পান করতে হবে। ৪. কণ্ঠ ব্যবহারে সাবধানি হোন। অতি উচ্চ বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলবেন না। ৫. অ্যালকোহল, কফি, চা, কোমলপানীয় শরীরের কোষে পানিশূন্যতা ঘটায়। এগুলো অল্প পরিমাণে খেলে সমস্যা নেই, তবে বেশি নয়। ৬. ধূমপান এবং অ্যালকোহল, তামাক, গাঁজা ও অন্যান্য নেশা সম্পূর্ণ পরিহার করুন। ৭. ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করুন এবং অল্প আহার করুন। ৮. অতিরিক্ত টেলিফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ৯. অপ্রয়োজনে বারবার গলা পরিষ্কার/কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ১০. শুষ্ক আবহাওয়া কণ্ঠের জন্য ক্ষতিকর। শীতাতপ যন্ত্রের বাতাস যাতে জলীয়বাষ্প কম, কণ্ঠের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। রাতে আর্দ্রতাকরণ যন্ত্র ব্যয়ভার করুন। ১১. উড়োজাহাজে বাতাস শুষ্ক থাকে। কফি, চা, কোমলপানীয় এড়িয়ে চলুন। প্রতি ঘণ্টায় কমপক্ষে ৮ আউন্স পানি পান করুন। ১২. পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারীদের NSAID জাতীয় ব্যথার ওষুধ এড়িয়ে চলা উচিত। ১৩. যখন বেশি মিউকাস উৎপন্ন হয়, তখন মিউকাস তরলকারী ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। ১৪. স্থানীয় চেতনানাশক যথেচ্ছ ব্যবহার করবেন না। ১৫. ধোঁয়া/ধুলা/দূষিত বাতাস এড়িয়ে চলুন। ১৬. গান গাওয়ার সময় শারীরিক, মানসিক অবসাদ মুক্ত থাকতে হবে। হালকা গরম পানিতে গারগিল করতে পারেন। ১৭. নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম।

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান; নাক কান গলা বিভাগ

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close