সাঈদ চৌধুরী

  ২০ এপ্রিল, ২০১৯

মতামত

দূষণ রোধের বিকল্প নেই

বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচ নম্বরে! দূষণ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ওষুধের ওপর বাঁচার প্রবণতা কতটা কাজে দেবেÑ এটা নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বাজারে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের ওষুধ বিক্রির হারের ওপরই বোঝা যায় আমাদের বায়ুদূষণের অবস্থা।

বাতাস দূষিত হওয়ার নির্দিষ্ট মাত্রাকে এখন আর সামনে আনার প্রয়োজনীয়তাই নেই, কারণ কিছু রাস্তা এমন আছে, সেখানে বাতাসে ভারী পার্টিকেল সব ধরনের স্ট্যান্ডার্ডকে অতিক্রম করতে পারবে। ধোঁয়ার অবস্থাও কিন্তু খুব আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। কয়েক দিন আগে একটি পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, ৯৮ শতাংশ ইটভাটাই হচ্ছে পরিবেশবান্ধব নয়। এর সঙ্গে রয়েছে গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া, মিল-ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত ধোঁয়া, কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি থেকে বর্জ্য পানি, যেখান থেকে অবমুক্ত হওয়া সালফারের গন্ধ মিশ্রিত বাতাস, বিভিন্ন যানবাহন ও আবাস, অফিস থেকে এসির নির্গত গ্যাস, মোবাইল টাওয়ারের তরঙ্গ, পোর্ট্রি ও ট্যানারি শিল্প এবং আবর্জনার ভাগাড় থেকে অবমুক্ত অ্যামোনিয়ার দুর্গন্ধÑ সবগুলো উপাদান মিলে বাতাস আজ নিঃশ্বাসের অনুপযোগী প্রায়। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯ (এসওজিএ) শীর্ষক প্রতিবেদন এ তথ্য আসে, বাংলাদেশ বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুর হারের দিক থেকে পৃথিবীতে পঞ্চম!

অনেকগুলো বিষয় নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো আমরা এখনো খুব বেশি অসচেতন। সামান্য রাস্তায় ধুলোজনিত যে পার্টিকেলগুলো বাড়ছে তা রাস্তা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করার কারণেই। অনেক সময়ই দেখা, যারা রাস্তা পরিষ্কার করছেন তারা রাস্তার ডিভাইডার ঘেঁষে ধুলোগুলো রেখে চলে যাচ্ছেন! এর ফলে কিছুক্ষণ পর রাস্তার ধুলো রাস্তায়ই ফিরে আসছে! এখানে দায়িত্বটি আসলে কার? সিটি করপোরেশনের অনেক কাজ আছে, এ রকম ছোট ছোট বিষয়গুলোর কারণে ছোট বিষয়গুলোই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাস্তা মেরামত দীর্ঘস্থায়ী হওয়াতেও এর প্রভাব পড়ছে। মূলত রাস্তার ধুলোর জন্য বায়ুদূষণের হার অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে চলাচলকারী শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষের ওপর।

উন্নত বিশ্বের মতো স্ট্যাক ইমিশন কমিয়ে আনার জন্য মেশিন সঠিকভাবে মেইনটেন্যান্স করা, সঠিক উচ্চতায় চুল্লি স্থাপন করা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফিল্টারিং সিস্টেম করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক কোম্পানির অ্যাক্সোস্ট বের করার জন্য যে চিমনি তা সরাসরি রাস্তা অভিমুখে দেওয়া। যখন বিদ্যুৎ যাচ্ছে এবং জেনারেটর চালু হচ্ছে; তখনই কালো ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে রাস্তা! এগুলো শিল্পায়নের কোনো নিয়ম হতে পারে না। গাজীপুর চৌরাস্তা হতে ময়মনসিংহগামী মহাসড়কেই দেখা যাবে এমনটা। আঞ্চলিক সড়কে তো কথাই নেই! নির্দিষ্ট উচ্চতার চিমনি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি এসিগুলোতে সিএফসি ফ্রি গ্যাস ব্যবহারের কথা জানে কতজন মানুষ। এসি চলছে, ঠান্ডা হচ্ছে তাতেই যেন শান্তি! কিন্তু পরিবেশের কী ক্ষতি হচ্ছেÑ এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

বায়ুদূষণের কথা চিন্তা করেই ইটভাটাগুলোকে সম্পূর্ণ নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। এখানে বড় বাধা হলো পরিকল্পনা। ইটভাটাগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনার জন্য প্রয়োজন তদারকি ও কোম্পানিগুলোকে সরকারের পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করা। রাস্তার বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগই তেমন পরিলক্ষিত হয় না। রাস্তার ধূলিমুক্ত করার জন্য যেমনি প্রয়োজন ধুলাবালি একবারে সরিয়ে নেওয়া। বায়ুদূষণ বন্ধে বৃক্ষ রোপণে আরো মনোযোগী হতে হবে। এমন কিছু বৃক্ষ আছে যেসব পরিবেশের ওপর প্রভাব তেমন ভালো নয়। সতেজ অক্সিজেন প্রদান করে এমন ব্ক্ষৃ বেশি রোপণ করতে হবে। শহরের বায়ুকে সতেজ করার জন্য বিশেষ করে ঢাকার বায়ুকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য পাশের অঞ্চলের বনভূমিগুলোকে রক্ষাও বড় প্রয়োজন। যদি বনভূমি বাঁচানো না যায়, তবে বাতাসকে দূষণমুক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

সর্বোপরি আইনকেও যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। যারা জেনারেটর ব্যবহার করছেন তাদের চিমনি যদি সঠিক উচ্চতায় না থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসিগুলোর গ্যাস ব্যবহারে সঠিক মানের গ্যাস ব্যবহার, ময়লার ভাগাড় সরিয়ে নিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনসহ আরো কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আমরা আর বায়ুদূষণ পরিবেশে আমাদের সন্তানদের লালন করতে চাই না। আমরা একটি দূষণমুক্ত পরিবেশ চাই। আগামী প্রজন্মকে একটি দূষণমুক্ত পরিবেশ উপহার দিতে চাই।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close