রেজাউল করিম খান

  ২৫ মার্চ, ২০১৯

বিশ্লেষণ

মুক্তিযোদ্ধা তালিকার শেষ কোথায়

পাকিস্তানি সেনাদের নজিরবিহীন নৃশংসতায় পূর্ব বাংলা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ ও যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। খুব সাধারণ অস্ত্র নিয়েই মানুষ রুখে দাঁড়ায়, প্রতিরোধ করে। দেশের লাখ লাখ মানুষ একটি অসম যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রতিপক্ষ ছিল অনেক শক্তিশালী। ফলে মুক্তিকামী জনতা প্রথমাবস্তায় পিছু হঠতে বাধ্য হয়। এটি ছিল সাময়িক। স্বাধীনতার জন্য পাগলপ্রায় মানুষ ঘর ছাড়ে কী এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণে। হয় মুক্তি, নয় মৃত্যু। কিশোর-তরুণ-মধ্যবয়সি লাখ মানুষের নিঃশব্দ মিছিল এগিয়ে চলে মুক্তির অন্বেষায়। দীর্ঘস্থায়ী গেরিলাযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে শুরু হয় প্রশিক্ষণ, দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে। প্রায় এক কোটি মানুষ প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারতের জনগণ ও সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। হানাদার পাকিস্তানিদের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিকামী বাঙালিকে প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধাস্ত্র প্রদান করে। অল্প দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে তারা পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যাম্প, স্থাপনা ও টহল দলের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। ভীতসন্তস্ত্র সৈন্যদের মনোবল ভেঙে পড়তে থাকে। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। এই ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আর যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে ওই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা। সেই কথাই ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মুক্তিবার্তা নামের একটি পত্রিকায় যে তালিকা প্রকাশ করে, তার ভিত্তিতেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তখনও অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নিজের নাম তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন না।

স্বাধীনতার পর দীর্ঘকাল এই অবস্থা চলতে থাকে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির কোটা দেওয়া হলে তারা উৎসাহী হন। পরে মাসিক ভাতা প্রদান কার্যক্রম চালু হলে প্রায় অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান সংগঠন কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ওই সব তালিকা তৈরি করে। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হলে সেখান থেকেও অনৈতিক পন্থায় কিছু মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হয়। ৪৮ বছরে তালিকা করা হয়েছে ছয়বার। অথচ এখনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। এমতাবস্থায় মুক্তিযুক্তবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ২৮তম সভায় যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৮ মার্চ। কিন্তু হাইকোর্টে একটি রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তা স্থগিত হয়ে যায়। আদালত মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণের নির্দেশ দেন। মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর এক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। প্রজ্ঞাপনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।’ এরপরে লেখা হয়েছে, ‘যথা’ শব্দটি। এর অর্থ ‘যেমন’, ‘যে রকম’, ‘দৃষ্টান্ত’ বা ‘উদাহরণ’। দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, (ক) যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন ট্রেনিং/প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন; (খ) যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং যেসব বাংলাইেশ বিশিষ্ট নাগরিক বিশ্বে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন;’Ñ এইভাবে ‘ঝ’ পর্যন্ত শ্রেণিতে যাদের কথা বলা হয়েছে, তারাই মুক্তিযোদ্ধা। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রজ্ঞাপনের প্রারম্ভে বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে যা বলা হয়েছে, উদাহরণে তা নেই। অর্থাৎ এখানে ‘যথা’ শব্দটি যথার্থ নয়। এটি মানলে ‘ক’ থেকে ‘ঝ’ পর্যন্ত ক্যাটাগরিতে উল্লিখিতরা ছাড়া স্থানীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারেন না। কিন্তু বাস্তবে ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের জন্য সহায়ক হিসেবে যাদের সঙ্গে নিয়েছিলেন, তারাও তালিকাভুক্ত হয়ে এখন ভাতা পাচ্ছেন। এতে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণে বিভ্রান্তির সুযোগ রয়েছে। সংজ্ঞায় উল্লিখিত বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের পর শব্দটি ‘যথা’ নয়, হওয়া উচিত ছিল ‘এ ছাড়াও’। প্রজ্ঞাপনে বয়স নির্ধারণ করা হয় ১৩ বছর। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত পরিপত্রে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে ১৯৫৯ সালের ৩০ মে তারিখের পূর্বে জন্ম হতে হবে। অর্থাৎ সর্বনি¤œ বয়স ১২ বছর ৬ মাস। অযৌক্তিক কারণে ঢালাওভাবে বয়স কমিয়ে করা হয়েছে সাড়ে ১২ বছর। কার স্বার্থে এমনটি করা হয়েছে, তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

স্বাধীনতার পর কখনো কোনো বিধি মেনে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো আইনও নেই। দীর্ঘদিন থেকে বলা হচ্ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কথা। সেই তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করে। বাছাই শেষে জামুকায় প্রায় ২৫ হাজার নাম পাঠানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই কমিটি গঠনে অনিয়ম, ত্রুটিপূর্ণ প্রতিবেদন, তালিকায় নাম রদবদলে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থের লেনদেন প্রভৃতি অভিযোগ ওঠে। এসব বিষয়ে উচ্চ আদালতে একাধিক মামলা হয়েছে। নানা অনিয়মের অভিযোগ স্বীকার করে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় পর যাচাই-বাছাই কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক একাধিকবার বলেছেন, ‘অচিরেই মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।’ সর্বশেষ গত বছর বলা হয়েছিল, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের পূর্বে গেজেট হবে। যাচাই-বাছাইয়ের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, যেসব মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়েছেন, তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা। কিন্তু শুরু থেকে এ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বিপরীত পথে হাঁটতে থাকেন। অর্থ ও রাজনৈতিক দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পায়। নতুনদের অন্তর্ভুক্তির চেয়ে পুরোনোদের বাদ দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ বেশি ছিল। উপজেলা ভাতা প্রদান কমিটি বিধি না মেনে নানা অজুহাতে অনেকের ভাতা স্থগিত করে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা ছিলÑ যাচাই-বাছাই শেষে নতুন তালিকা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আর কাউকে গেজেটভুক্ত করা হবে না। কিন্তু বিস্ময়কর সত্য এটাই যে, বিশেষ বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছে। তাদের নাম গেজেটভুক্ত হয়েছে এবং তারা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন। এদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাও আছেন। জানা গেছে, ১৪ মাসে ২ হাজার ৫৯৮ জনের নাম গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৩৪ জন সাধারণ, ৯৮ জন বীরাঙ্গনা ও ১৬৬ জন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কর্মরত (শব্দসৈনিক) ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪৮২ জন। সংসদীয় কমিটির বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে গত বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি সংবাদপত্র জানায়, দেশে গেজেটভুক্ত মোট মুক্তিযোদ্ধা ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৫ জন। যাচাই-বাছাই কার্যক্রমকে পাস কাটিয়ে কীভাবে এরা মুক্তিযোদ্ধা হলেন, তার জবাব মিলছে না। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয় এসব করছে তার জানা ছিল না। এটি শর্টকাট পদ্ধতি!’ শর্টকাট পদ্ধতির মুক্তিযোদ্ধারা সৌভাগ্যবান। কিন্তু বাদ পড়া যেসব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সরকারি বিধি মেনে যাচাই-বাছাইয়ে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের নাম গেজেটভুক্ত না হওয়ার কষ্ট কি কেউ বোঝার ক্ষমতা রাখেন!

মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা তাদের প্রাপ্য। একাত্তরে কোনো ব্যক্তিগত চাহিদার কারণে নয়, বরং বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা জীবন বাজি রেখেছিলেন। এমনকি অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ পর্যন্ত নেননি, নিঃস্বার্থ যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু সদস্য, মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা অনেক অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাও সনদ নিয়েছেন চাকরিতে দুই বছর বেশি থাকার জন্য।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বেসামরিক ক্ষেত্রে শুধু লাল মুক্তিবার্তায় নাম এবং ভারতীয় গেরিলা বাহিনীর করা তালিকার বাইরে যারা সনদ নিয়েছেন এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে যারা সাময়িক সনদ গ্রহণ করেছেন, তাদের সনদ বাতিল বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ সামরিক ও রাজনৈতিক সরকারের প্রধানের স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করে এখন মুক্তিযোদ্ধার সঠিক অবিতর্কিত তালিকা করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, আসছে মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চের আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। মন্ত্রী অবশ্য একাধিকবার এমন কথা বলেছেন। কিন্তু কার্যকর হয়নি। মন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা, বেসামরিক গেজেট, সাময়িক সনদ এবং বীরাঙ্গনার সাময়িক সনদপ্রাপ্তদের সনদ ও ভাতা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে গতকাল সোমবারই পত্র দেওয়া হয়েছে। সঠিক পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত না করা পর্যন্ত এসব সনদধারী ভাতা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। এ সংখ্যা কমবেশি ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার হতে পারে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। বলা বাহুল্য হবে না যে, ডিসি-ইউএনওরা এখনো সেই পত্র পাননি।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের পর থেকে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। এদের প্রায় সবাই মৃত্যুর শঙ্কা নিয়ে অবরুদ্ধ ছিল ৯ মাস। দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিপাগল মানুষের একাংশ অংশ নেন প্রতিরোধ যুদ্ধে। একাংশ স্থানীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে যুদ্ধ করেন। একাংশ পরে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন। একাংশ ছিল সেনাবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার। এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে কাকে বাদ দেবেন? যারা ভারতে পালিয়ে গিয়ে আরাম-আয়েশে দিন কাটিয়েছেন, তাদের? তাদের কারো সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। নেই কোনো আইন। রাজনৈতিক নেতারা গলা কাঁপিয়ে ভাষণ দেন, ‘৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন।’ আর মাত্র আড়াই লাখ মানুষকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, তাদের সংখ্যা ১০ লাখ হওয়া উচিত। তবে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত বিহারি, রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির সদস্যসহ একশ্রেণির চাকরিজীবী স্বাধীনতার বিরোধী ছিল। দুঃখের বিষয় তাদের তালিকা নেই। সুতরাং ‘ভুয়া’ অমুক্তিযোদ্ধা বের করার আগে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করুন। তাদের শ্রেণিবিন্যাস করুন। তাদের হারানো সম্মান পুনরুদ্ধার করুন। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিগত কোনো কিছু প্রাপ্তির আশায় সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close