reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ মার্চ, ২০১৯

পাটশিল্পকে বাঁচাতে নজরদারি দরকার

যে সময় বিশ্বে পরিবেশ রক্ষায় আলোচনার ঝড় উঠেছে, ‘পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে পরিবেশবান্ধব বিকল্প চালু করা হোক’Ñ ঠিক সে সময় ‘বিজেএমসিকে পাট দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা’। সংবাদটি যেকোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের জন্য দুঃসংবাদও বটে। তারা বলছেন, পাটশিল্পের জন্য কাঁচামাল হিসেবে উচ্চারিত প্রথম নামটিই হচ্ছে পাট। এই কাঁচামাল সরবরাহ থেমে গেলে পাটশিল্প কারখানার চাকাও থেমে যাবে। নিভে যাবে পাটশিল্প শ্রমিকদের উনুনের আগুন। নেতিবাচক চাপে পড়বে দেশের অর্থনীতি। তাদের জিজ্ঞাসা, কেন ব্যবসায়ীরা বিজেএমসিকে কাঁচামাল সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকবেন?

মিডিয়ার তথ্য মতে, অর্থ সংকটে কাঁচা পাট সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। করপোরেশনের কাছে দুই বছর ধরে সরবরাহ করা পাটের মূল্য এখনো বকেয়া আছে। ফলে বিজেএমসির কাছে আর বাকিতে পাট বিক্রি করতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে সরকারি পাটকলগুলোর চাহিদা অনুযায়ী পাট কিনতে পারছে না বিজেএমসি। কাঁচামাল সংকটে পাটকলগুলোর উৎপাদন তাই নেমে এসেছে অর্ধেকে। চলতি বছরের মধ্যে এ বকেয়া পরিশোধ করা না হলে বেশ কটি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিজেএমসির পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৮২৭ কুইন্টাল। তবে অর্থ সংকটের কারণে ওই বছর করপোরেশনের অধীন মিলগুলো পাট কিনতে পেরেছিল মাত্র ১১ লাখ ৪৬ হাজার ১২০ কুইন্টাল, যার বাজার মূল্য ৫৫২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে করা হয় ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৩১ কুইন্টাল। কিন্তু এ লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করতে পারেনি বিজেএমসি। কেনার পরিমাণ ছিল ১২ লাখ কুইন্টালের কিছু বেশি এবং যার সিংহভাগই ছিল বাকিতে। বাকিতে পাট কিনতে না পারায় কমে আসছে বিজেএমসির অধীন মিলগুলোর কাঁচা পাটের মজুদ। গত বছরের অক্টোবরের শেষে বিজেএমসির পাটের মজুদ ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮২ কুইন্টাল। চলতি সালের জানুয়ারিতে তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৭৪ কুইন্টালে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই বছরের বকেয়াসহ বিজেএমসির কাছে তাদের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। এ কারণে নিবন্ধিত শতাধিক এজেন্সির মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠানই চলতি অর্থবছরে বিজেএমসিকে কোনো পাট সরবরাহ করেনি। পাওনা আদায়ের জন্য বারবার ধরনা দিয়েও আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাননি তারা। অন্যদিকে বিজেএমসি বলছে, সরকারের কাছে বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ অর্থ ছাড় হলে পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে বলা যায়, পাটশিল্প খাত এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। ভর্তুকির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। নিকট ভবিষ্যতের একটি সম্ভাবনাময় লাভজনক খাতকে এভাবে স্যালাইন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে আঁতুর ঘরে গলা টিপে শিশুকেই হত্যা করা হবে, যা কোনো দেশপ্রেমিকের কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের তৈরি পণ্যের চাহিদা কম নয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পলিথিন ব্যাগের কথা উচ্চারিত হতে পারে। এই ব্যাগের ব্যবহার যদিও নিষিদ্ধ, তবু তার ব্যবহার পাললিক মাটির মতো উর্বর। পাটকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য একে প্রতিহত করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া আরো বহুমুখী ব্যবহারের জন্য গবেষণারও দাবি রাখে। আমরা মনে করি, এ শিল্পকে বাঁচানো এবং একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। পাটের ভবিষ্যৎ যেকোনো শিল্পের চেয়ে উজ্জ্বল। আগের মতো এই সোনালি আঁশই নিকট ভবিষ্যতে হতে পারে জাতীয় আয়ের একটি অন্যতম উৎস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close