মাহফুজ আল মাদানী

  ০৬ মার্চ, ২০১৯

মতামত

ভালো কাজের বিকল্প নেই

ভালো কাজ মানুষকে ভালো করে তোলে। আর ভালো মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটা সুন্দর পরিবেশ, ভালো সমাজ। ভালো কাজ বিভিন্ন ধরনের; যা গুনে শেষ করার মতো নয়। রাস্তা থেকে কোনো কষ্টদায়ক জিনিস দূর করাও ভালো কাজ। অন্য ভাইকে দেখে মুচকি হাসিতে কথা বলাও ভালো কাজ। ‘হজরত আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কোনো ভালো কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার।’ (মুসলিম ১৪৪, তিরমিজি ২৩০৪, বায়হাকি ৩১৮৫, মিশকাতুল মাসাবিহ ১৮৯৪)। যেকোনো মানুষকে পথ দেখানো ভালো কাজের শামিল। আর প্রতিটি ভালো কাজের জন্য মহান আল্লাহতায়ালা পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী, ‘যে ব্যক্তি ভালো কাজ করবে তার জন্য রয়েছে তার দশ গুণ সওয়াব’ (সুরা আল আনআম : ১৬০)। একজন মানুষ চাইলে দিনে হাজারো রকমের ভালো কাজ করতে পারে। সুপরামর্শ প্রদান, ঋণ প্রদান, অন্যের খুশিতে খুশি হওয়াও ভালো কাজ। আর প্রতিটি ভালো কাজই সদকা। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি ভালো কাজই একটি সদকা’ (বোখারি ৬০২১, মুসলিম ৫২, আবু দাউদ ১৯৭০, তিরমিজি ২৩০৪, বায়হাকি ৯৫, মিশকাতুল মাসাবিহ ১৮৯৩)।

আমরা সমাজের সবাই যদি প্রতিটি ভালো কাজে উদ্যোগী হই, চাই তা সামান্য হোক। তখন আমাদের সমাজ ভালো না হয়ে পারে না। আমরা প্রত্যেকে ভালো হলে আমাদের চারপাশের সবাই ভালো হবে। হবে আদর্শ ও ন্যায়পরায়ণ। এজন্য তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ, বড় থেকে বড় প্রতিটি কাজকে গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই সামাজিক জীব। এ ক্ষেত্রে আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। আজ কেউ আমার মুখাপেক্ষী হলে তাকে অসহযোগিতা বা ধমক দিয়ে দূর করতে নেই। হতে পারে কাল আমি তার মুখাপেক্ষী হতে পারি। তখন সেও আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারে। আমি ভালো আচরণ ও সহযোগিতার মনমানসিকতা দেখালে সে কাল আমার প্রতি সহনশীল ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। যা সুন্দর ও আদর্শ সমাজ গঠনে অনন্য ভূমিকা রাখবে ইনশা আল্লাহ। ছোট-বড় কাউকে অবহেলা করতে নেই। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট-বড়, ধনী-গরিব, সাদা-কালো, আরব-অনারব ভেদাভেদ না করে সবাইকে নিজের আপন করে নিতেন। কাউকে পর ভাবতেন না। সবার প্রতি তার দয়া, ভালোবাসা, দান, উত্তম ব্যবহার ছিল অতুলনীয়। তার আচার-আচরণ ব্যবহার দেখে তার প্রতি ইমান আনতে দ্বিধাবোধ করত না। আমাদের সমাজের লোকজন রাসুলের আদর্শে আদর্শিত হতে পারলে আজ আমরা এত মনুষ্যত্বহীনভাবে সমাজে বসবাস করতাম না। আমাদের সামজের প্রতি তাকালে ভালো কাজ করার মতো এবং উপকার করার মতো মানুষ খুব কমই দেখা যায়; যা অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জাজনক বটে।

আমরা যদি ভালো কাজ না করতে পারি, তাহলে মনের মধ্যে যেন ভালো কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করি। সদিচ্ছা থাকার কারণে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সওয়াব দান করবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর বান্দা যখন কোনো ভালো কাজের নিয়ত করে অথচ এখনো তা করেনি, তখন আমি তার জন্য একটি সওয়াব লিখি; আর যদি তা কাজে পরিণত করে তবে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সওয়াব লিখি’ (মুসলিম-২০৪)। প্রতিটি ভালো কাজের ইচ্ছা পোষণের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে প্রিয় হতে পারি। তাই ভালো কাজ না করতে পারলেও আমরা যাতে খারাপ বা ঘৃণিত কাজে জড়িত না হই। শুধু তাই নয়, ভালো কাজের পথ দেখানোর মাধ্যমে আমরা ভালো কাজ পালনকারীর সমপরিমাণ পুণ্য পেতে পারি। এসব মহৎ কাজ থেকে কোনোভাবেই আমাদের দূরে থাকা সমীচীন নয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভালো কাজের পথ দেখাবে, সে তার প্রতি আমলকারীর সমান নেকি পাবে’ (মুসলিম ১৩৩, আবু দাউদ ৫১২৯, তিরমিজি ২৩০৪, আহমদ ১৭০৮৪, বায়হাকি ৭২৪৯, মিশকাতুল মাসাবিহ ২০৩)। আমরা কাউকে ভালো কাজে উৎসাহিত করে সওয়াব অর্জন করতে পারি। পাশাপাশি আদর্শ সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি আমাদের চারপাশ।

আমরা কী ভালো কাজ করছি, না খারাপ কাজ করছি, তা কেমন করে বুঝব? হাদিসের ভাষ্যমতে, এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলল, আমি ভালো কাজ করেছি, না মন্দ কাজ করেছি, তা কীভাবে জানতে পারব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীর মুখে বলতে শুনবে যে, তুমি ভালো কাজ করেছ, তাহলে তুমি (সত্যিই) ভালো কাজ করেছ। আর যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীর মুখে বলতে শুনবে যে, তুমি মন্দ কাজ করেছ, তাহলে তুমি সত্যিই মন্দ কাজ করেছ।’

আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদা সর্বদা ভালো কাজ করতেন। এর পরও আল্লাহতায়ালার কাছে ভালো কাজ করার জন্য তিনি প্রার্থনা করতেন। আমাদেরও উচিত সর্বদা ভালো কাজ করার জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করা। হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো, যারা ভালো কাজ করে খুশি হয় ও মন্দ কাজ করে ক্ষমা চায়’ (ইবনে মাজাহ ৩৮২০, আহমদ ২৪৯৮০, মিশকাতুল মাসাবিহ ২৩৫৭)।

আমরাও আমাদের প্রিয় নবীর অনুসরণে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট হবে। তবেই সমাজ হবে আদর্শময়।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close