সাধন সরকার

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আলোচনা

চাকরিতে যোগ দেওয়ার বয়স

একটি দেশের প্রাণশক্তি হলো তরুণ জনগোষ্ঠী। যেকোনো দেশের মোট জনসংখ্যার যত বেশি তরুণ জনগোষ্ঠী থাকে, সে দেশ তত বেশি সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পায়। তরুণ্যের শক্তি বা কর্মদক্ষতার ওপর ভর করে একটি দেশ উন্নতি লাভ করে। স্বপ্ন দেখাই হলো তারুণ্যের ধর্ম। তবে তরুণদের মাঝে মাঝে হতাশও হতে হয়! দুঃখের বিষয় হলো, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে দেশের অধিকাংশ তরুণদের মধ্যে বিগত কয়েক বছর ধরে মর্মপীড়া কাজ করছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার জনমত জরিপেও প্রায় ৯০ ভাগের বেশি তরুণ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তারা বিভিন্ন সময় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে বিগত দিনে সরব থেকেছেন এবং তরুণরা তাদের দাবির বিভিন্ন যৌক্তিকতা তুলে ধরে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। বলতে দ্বিধা নেই, লাখ লাখ তরুণ সত্যিই আজ হতাশাগ্রস্ত! তারা এ কথা মানতে পারছেন না যে, পড়তে পড়তে বয়স ৩০ বছর পার হওয়ার কারণে তারা আর চাকরিতে আবেদন করতে পারবেন না। এক একটা বিসিএসের আবেদনসহ অন্যান্য চাকরির আবেদন চলে যাচ্ছে আর লাখ লাখ তরুণ চোখের জল ফেলছেন, তারা আরো হতাশ হয়ে পড়ছেন। সদ্য চাকরির বয়স পার হওয়া তরুণদের প্রাণ গুমরে গুমরে কাঁদছে। তারুণ্যের শক্তি আজ ‘৩০’ এর দেয়ালে চাপা পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে! জাতীয় সংসদে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে বহুবার দাবিও উঠেছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী বর্তমান তরুণ সমাজ তাদের গত প্রায় সাত বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির পালন করে আসছে।

সত্যি বলতে মানসম্মত চাকরি পেতে হলে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করতে করতে প্রায় ২৫ থেকে ২৬ বছর লেগে যায়। বর্তমানে গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। আবার অবসরের বয়সসীমাও বেড়েছে। অন্যান্য কিছু পেশায় অবসরের বয়সসীমা আরো বেড়েছে। পৃথিবীর ১৬০টিরও অধিক দেশে (রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সুইডেন, ভারতসহ অধিকাংশ উন্নত দেশে) চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ এর অধিক। বিশ^বিদ্যালয় বা কলেজের একাডেমিক লেখাপড়া শেষ করতে করতে বিভিন্ন কারণে প্রায় ২৬ বছর লেগে যাচ্ছে! একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করতে এবং চাকরির পড়াশোনা শুরু করতে করতে বয়স ৩০ পার হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ তরুণ চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন। বাস্তবতা হলো, বর্তমানে লাখ লাখ ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষা আছে, সনদ আছে কিন্তু চাকরি নেই! বয়স ৩০ পার হওয়া মানে অর্জিত সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ! সহজ কথায়, একজন তরুণকে ৩০ এর গন্ডির মধ্যে বেঁধে রাখা হচ্ছে! ফলে বয়স ৩০ এর মধ্যে চাকরি না পাওয়া একজন তরুণকে নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তথ্য মতে, বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ কর্মক্ষম তরুণ-তরুণী বেকার। এদের প্রায় অর্ধেক অংশই ¯œাতক-¯œাতকোত্তর শেষ করা চাকরিপ্র্রত্যাশী। তবে প্রকৃতপক্ষে বেকারের সংখ্যা আরও বেশি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ এ বেঁধে রাখার ফলে সরকার সব শিক্ষার্থীদের মেধা কি আদৌ কাজে লাগাতে পারছে ? সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার ফলে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানও ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে জনবল নিয়োগ দিচ্ছে না! আবার ‘যুবনীতি- ২০১৭’ তে যুবাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ রাখা হয়েছে। তাহলে কেন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ রাখা হবে?

দেশের সব তরুণের সম্ভাবনা, সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। তাই উন্নত বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষিত তরুণদের কাজে লাগাতে দেশের উন্নয়নে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো প্রয়োজন। এতে করে বেকারত্বের বোঝা কমবে। সদ্য বেকার বনে যাওয়া তরুণরা দেশের অভিশাপ নয়, তারাও সুযোগ পেলে দেশের ও পরিবারের জন্য কিছু করতে চায়। সেই সুযোগ রাষ্ট্রকে তৈরি করে দিতে হবে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের জনশক্তি অপচয় হবে। বেকারত্বের জ¦ালা সহ্য করতে না পেরে অনেকে সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন! অনেক মেধা আবার বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রে বেকার তরুণদের জন্য বেকার ভাতা চালু আছে। কিন্তু আমাদের দেশে বেকার ভাতা না হোক, অন্তত চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে তরুণদের বেকারত্বের হাত থেকে তো মুক্তি দেওয়া যেতে পারে! সময়ের যুক্তিসঙ্গত ও যুগোপযোগী দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সব দিক বিবেচনা করে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার সুপারিশ (একাধিকবার) করেছিল গত সরকারের জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ‘সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তরুণ সমাজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রতি আবারও আস্থা রেখেছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর মর্মযাতনা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তরুণ সমাজের আকুল আবেদন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৩৫ করা হোক।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close