রায়হান আহমেদ তপাদার

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

বিশ্লেষণ

অর্থনৈতিক উন্নয়নে মানবসম্পদ

সমাজবিজ্ঞানীরা মানবসম্পদকে মনে করেন কোনো ব্যক্তির সামাজিক সংগঠনে আবদ্ধ থাকার ক্ষমতা। কারণ সামাজিক জীবনের সফলতা আসে মানুষের দলবদ্ধ ও গোষ্ঠীগত প্রচেষ্টার দ্বারা। আর মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সামাজিক বিবর্তনে সহায়তা করতে পারার ব্যক্তিক সক্ষমতা। ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান নিয়ে যারা কথা বলে থাকেন তারাও আধুনিক যন্ত্রনির্ভর যুগেও যন্ত্রের চেয়ে মানবের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তারা মনে করেন, মানবসম্পদ হলো মানবশক্তির প্রয়োজনভিত্তিক প্রায়োগিক রূপ। আধুনিক বিশ্বে মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়টি বিশেষভাবে প্রচলিত। গবেষকরা মনে করেন, সমাজ, দেশ ও বিশ্বের সামগ্রিক অগ্রগতিকে সচল রাখার জন্য কেবল মানবসম্পদই ভূমিকা রাখতে পারে। এ সম্পদকে অনেকে অনেকভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, তবে মূল কথা হলো অর্থনৈতিকভাবে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উৎপাদনসহ আনুষঙ্গিক কার্যাবলি এবং ইতিবাচক-কল্যাণকর বিষয়াদির সঙ্গে জনসংখ্যার যে অংশটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে তা-ই মানবসম্পদ। মানুষ মূলত বিশ্বাসের বিশ্বে বাস করে। মানুষের পরস্পরের সম্পর্ক, সমাজের সব শক্তির সৌহার্দ ও সহযাত্রা, জরুরি উন্নয়ন কর্মভাবনার সফল বাস্তবায়ন, চিন্তা ও চৈতন্যে সমন্বয় সবই আস্থার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। আস্থা আত্মবিশ্বাসকে বলীয়ান করে, আত্মমর্যাদা বোধকে জাগ্রত করে, জাতীয় ঐক্য চেতনায় প্রেরণা জোগায়, গঠনমূলক ও উন্নয়নধর্মী কর্মোদ্যোগে প্রত্যয় ও প্রতীতি দান করে। পক্ষান্তরে পারস্পরিক আস্থাহীনতা জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরায়, বিভেদের দেয়াল গন্ডিবদ্ধ করে ফেলে সব মুক্ত চেতনার প্রহরকে, নিরুৎসাহ, নিরুত্তাপ-নিস্পৃহতাকে লালন-পালন করার ফলে মানুষ ও প্রকৃতি সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের পথ পায় না। তাইতো যত অস্থিরতা।

বিগত ৪৭ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবশ্যই নেহাত নয়, আস্থা সৃষ্টির মতো অনেক অর্জন আছে। কৃষিতে অভূতপূর্ব নীরব সাফল্য রয়েছে, সে কৃতিত্ব কৃষককে দিলাম কি দিলাম না, খোদ কৃষক তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। এটা সত্যি যে, যার যা প্রাপ্য তা তাকে না দিয়ে অপ্রাপ্য বর্ণচোরাদের বেসাতির বন্যায় ভাসে যে দেশ, সে দেশে সাফল্য তথাকথিত বড়দের ভাগাভাগির ভাগাড়ে চলে যায়। সে কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনা ও তাদের বিকাশ সম্ভাবনা উন্নয়ন ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেও যেন আসে না। পক্ষান্তরে তথাকথিত বড় বড় গ্রুপের কাছে চলে যায় সৃষ্ট পুঁজির বেশির ভাগ, করায়ত্তে তাদের সব ব্যবসা-বাণিজ্য সব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ। মানুষই বড় কথা। এই মানুষের দায়িত্ববোধের দ্বারা কর্তব্য কর্ম সূচারুরূপে সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজ সমৃদ্ধি লাভ করে। আবার এই মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণে সমাজের সমূহ ক্ষতিসাধিত হয়। মানবসম্পদ না হয়ে সমস্যায় পরিণত হলে সমাজের অগ্রগতি তো দূরের কথা, সমাজ মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। মানুষের উদ্ভাবনীশক্তি সভ্যতার বিবর্তনে সহায়তা হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা মানুষের সার্বিক উন্নয়নকে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের সব উন্নয়নের পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করে থাকেন। সমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণ সৃষ্টিতে মানুষের সার্বিক উন্নতি অপরিহার্য শর্ত। আগে সমাজ, না আগে মানুষÑ এ বিতর্ক সর্বজনীন। মানুষ ছাড়া একেকটি মানুষের উন্নতি সবার উন্নতি, সমাজের উন্নতি। একেক মানুষের দায়িত্ববোধ, তার কান্ডজ্ঞান, তার বৈধ-অবৈধতার উপলব্ধি এবং ভালো-মন্দ সীমা মেনে চলার চেষ্টা-প্রচেষ্টার মধ্যে পরিশীলিত পরিবেশ গড়ে ওঠা নির্ভর করে। রাষ্ট্রে সব নাগরিকের সমান অধিকার এবং দায়িত্ব নির্ধারিত আছে।

কিন্তু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা অধিকার আদায়ের সম্ভাবনা ও সুযোগকে নাকচ করে দেয়। পণ্য ও সেবা সৃষ্টি না হলে চাহিদা অনুযায়ী ভোগের জন্য সম্পদ সরবরাহে ঘাটতি পড়ে। মূল্যস্ফীতি ঘটে, সম্পদ প্রাপ্তিতে প্রতিযোগিতা বাড়ে। পণ্য ও সেবা সৃষ্টি করে যে মানুষ, সেই মানুষই ভোক্তার চাহিদা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতির বয়স এখন প্রায় ৪৭। একজন মানুষ এ বয়সে থাকে পুরোমাত্রায় পারঙ্গম, উদ্ভাবনায় উৎকৃষ্ট, অভিজ্ঞতায় অধিষ্ঠিত এবং চিন্তা ও চৈতন্যে সজাগ, সতেজ ও স্বপ্রতিভ। তবে উন্নয়ন ভাবনায় ও অভিযাত্রায় চার দশকের পথচলা একটা দেশ ও অর্থনীতির জন্য এটা খুব বড় একটা সবল সময় নয়। বিশেষ করে বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানে, দুর্যোগপ্রবণ প্রাকৃতিক পরিবেশে, জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ, আস্থা-অনাস্থার দোলাচলে সমাজ ও রাজনৈতিক-অর্থনীতির সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার বিবরে বেড়ে ওঠা একটা উন্নয়ন অভিমুখী দেশের পক্ষে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিগত ৪৩ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। পৃথিবীর খুব কম দেশেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির এমন পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। আর তার চেয়ে বড় কথা জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সংস্থান, বিশেষ করে তাদের কর্মসৃজন সুযোগ সম্প্রসারণের প্রয়াস-প্রচেষ্টায় সফলতাও বাংলাদেশের বেলায় ভিন্ন। মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য সূচক অনেক দেশের নিচে। উৎপাদনে আত্মনিয়োগের খবর নেই চাহিদার ক্ষেত্রে ১৬ আনা টানাপড়েন তো সৃষ্টি হবেই। অবস্থা ও সাধ্য অনুযায়ী উৎপাদনে একেকজনের দায়িত্ব ও চাহিদার সীমারেখা বেঁধে দেওয়া আছে; কিন্তু এ সীমা অতিক্রম করলে টানাপড়েন সৃষ্টি হবেই। ওভারটেক করার যে পরিণাম দ্রুতগামী বাহনের ক্ষেত্রে, সমাজে সম্পদ অর্জন ও ভোগের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রমে একই পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। সমাজে অস্থিরতা ও নাশকতার যত কারণ এ যাবৎ আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে এ মৌলিক অধিকার অস্বীকৃতি, দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধে বিভ্রান্তি ও বর্জন, সম্পদের বণ্টন ও অর্জনে বৈষম্য এবং আত্মত্যাগ স্বীকারে অস্বীকৃতিই মুখ্য। তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে বানরের ওপরে ওঠার চেষ্টা-প্রচেষ্টার মতো সম্ভাবনাময় অর্থনীতিরও শনৈঃগতিতে শীর্ষে যাত্রার পথে বারবার বাধা আসে। সবার প্রয়াসে অর্জিত সাফল্যকে নিজেদের সাফল্য বলে বড় করে দেখানোর প্রগলভতায়, দোষারোপের প্রবণতায়, আক্ষেপে, সংক্ষোভে ফেটে পড়াও এ শ্রেণির দুর্ভাগ্য ভারাক্রান্ত অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য। উন্নয়নে উত্থান-পতন থাকবেই; কিন্তু উত্থান বেশি, না পতন বেশি, না সমান সমান, তা দেখা দরকার।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি তথা ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এক বছরেই তিন ধাপ এগিয়েছে। মাথাপিছু আয়, গড় আয়ুসহ বিভিন্ন মাপকাঠিতে উন্নতির কারণে এ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ১৮৯টি দেশ নিয়ে করা সূচকে বাংলাদেশ লাভ করেছে ১৩৬তম স্থান। সূচকে সবার ওপরে আছে ইউরোপের দেশ নরওয়ে। ২০১৭ সালের সূচকে ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৯তম। প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লিঙ্গ সমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপি এ সূচক তৈরি করে। এসবের মানদন্ডে এবার বাংলাদেশের এইচডিআই মান দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬০৮। গত বছর ছিল শূন্য দশমিক ৫৭৯। সূচক অনুযায়ী স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। এ তালিকায় শীর্ষে থাকা নরওয়ের এইচডিআই মান শূন্য দশমিক ৯৫৩। দক্ষিণ এশিয়ায় মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের আগে আছে ভারত ও ভুটান। তারা লাভ করেছে ১৩১ ও ১৩৪তম স্থান। তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে ঢের পিছিয়ে পাকিস্তান ও নেপাল। মানব উন্নয়ন সূচকে তিন ধাপ এগিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে এক সুখবর। তবে হতাশার দিক হলো, এদিক থেকে বিশ্ব পরিসরে আমাদের দেশ ১৩৫টি দেশের চেয়ে পেছনে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও ভুটান কিছুটা হলেও এগিয়ে। মানব উন্নয়নে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সাতটিই ইউরোপের। অস্ট্রেলিয়াকেও একই গোত্রের বলে ধরা হয়। এ তালিকায় রয়েছে এশিয়ার দুই দ্বীপ দেশ সিঙ্গাপুর ও হংকং।

চীন বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হলেও মানব উন্নয়নে তারা এখনো পিছিয়ে। মানব উন্নয়নে এগিয়ে যেতে হলে প্রতিটি বিষয়ে আমাদের আরো দীর্ঘ পথ চলতে হবে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা অতিক্রমে আন্তরিক হওয়াও জরুরি। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার পর ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে উড়াল দেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। মানব উন্নয়নে সে কৃতিত্বের ধারাবাহিকতাকে ধরে রাখতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কৃষিনির্ভর আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি কাজে পরিপক্ব হওয়ার জন্য গড়ে উঠেছে কৃষি ইনস্টিটিউট, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। অথচ আমাদের সাধারণ মানুষ থেকে কৃষি শিক্ষার্থীদেরও ধারণা এমন, কৃষিকাজ করবেন তারা যারা অশিক্ষিত বা কৃষক। ফসলি ভূমিতে বীজ বোনা থেকে শুরু করে সব কাজই কৃষকের। শিক্ষিত লোকেরা কীভাবে এসব কাজে পা বাড়াবে? বাস্তবতা এমনই হয়ে উঠেছে? কৃষিবিজ্ঞানে পড়–য়া শিক্ষার্থীও এখন শুধু গবেষণা, অফিশিয়াল কর্ম অথবা কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনায় সীমাবদ্ধ। আবার অনেকেই অন্য পেশাকে বেছে নিয়েছে জীবিকার উপায় হিসেবে। অথচ কৃষিতে যদি অন্তত কৃষি শিক্ষিতদের পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো যেত, অর্থনৈতিকভাবে আরো অগ্রসর হওয়া যেত। উন্নত অনেক দেশ এখন প্রযুক্তি ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে কৃষির ওপর গুরুত্বারোপ করে অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছে। এমনকি জাতীয় প্রয়োজন পূরণ করে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করছে। বড় আফসোসের বিষয়, কৃষিনির্ভরশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও ব্রাজিল, চীনের মতো দেশগুলো থেকে আমাদের কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়।

কৃষিতে সফল এমন দেশগুলোর আদলে আমাদের কৃষিক্ষেত্রকেও যুগোপযোগী ও পরিকল্পিত করা প্রয়োজন। কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিভাগের ওপরও নজর দেওয়া প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবে একা বা ক্ষুদ্র পুঁজিপতিদের পক্ষে সম্ভব নয় বৃৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান করা। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র স্বল্প পুঁজিপতিদের একজোট করার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ভূমিকা রাখতে পারে। এভাবে বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। মানবকে সম্পদে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে শিক্ষা অন্যতম একটি মাধ্যম। গতানুগতিক ধারার শিক্ষাব্যবস্থার বিপরীতে পরিকল্পিত ও কর্ম উপযোগী শিক্ষা বলতে শুধু কারিগরি শিক্ষাকেই বোঝায় না। সে শিক্ষা এমন হবে না যে, পাস করার পর মিলবে না কর্ম। আবার মেধাবীরা উচ্চশিক্ষার নামে যে হারে বিদেশে পাড়ি জমায় এবং তাদের মাঝে দেশে না ফেরার প্রবণতা। মানবসম্পদ পাচারই বটে। এমন যে, সে জন্য শিক্ষাজীবন শেষে দেশে ফেরার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close