সাহিদা সাম্য লীনা

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

মতামত

কন্যাশিশুর নিরাপত্তা

কন্যাশিশুর নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে রাখুন। সজাগ হোন নিজে। সজাগ করুন অন্যকে। আপনার থেকে একজন শিখবে। এভাবে শত শত, হাজারজন শিখবে। শিশুরাও একসময় শিখবে কোন পন্থায় কীভাবে নিজেকে বাঁচাতে হয়। ধর্ষক নিজেদের মধ্যে আশপাশে ঘুরছে। দিন দিন লালন-পালন হচ্ছে এরা। দুধ-কলা দিয়ে সাপ পোষার আর মানে হয় না। শিশুদেরও আমরা তৈরি করি এখন থেকে। একসময় কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো ইহুদি ফতোয়ার কারণে! সময় পরিক্রমায় বাবাদের ভয়ে; নিজ ওরসজাতের ভয়ে! সমাজপতিদের ভয়ে। পরবর্তীতে কন্যাশিশু জন্ম নেওয়া মানে ছিল লজ্জা, ভয়, আতঙ্কের।

একটা পরিবার বা একজন নারী যখন পরপর কন্যাসন্তানের জন্ম দিতেন তাকে প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণায় দিন কাটাতে হতো। ঘরে ঘরে সরেজমিনে, এমন বহু চিত্র রয়েছে; যা এক একটা কালের সাক্ষী। বহু নারীর হৃদয় ক্ষত নিয়ে বসে আছেন যুগ যুগ। সে চিত্র বহু আন্দোলনে ৯৯ শতাংশে এসে থামলেও নারীর জীবনে আর একটি ব্যাধি মহামারী আকারে রূপ নেয়। ধর্ষণ! সামাজিক এক অসুখ। ক্যানসারের চাইতেও ভয়াবহ! যে রোগের চিকিৎসা থাকলেও সেভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না! নারীর নিরাপত্তা এখন কচুপাতার পানি!

ধর্ষণ রোগের প্রাদুর্ভাব এতটা যে, এর মাত্রা বেড়ে, নারীর জীবন এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। এমতাবস্থা যখন চরমে, নারী এখন আর বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার প্রয়োজন হয় না। একটি কন্যা যার জন্মের পরই নিরাপত্তাহীন, যা আগে ভাবা হতো না! মায়ের পেট থেকে আসার সঙ্গে সঙ্গে এখন বাবা-মাকে থাকতে হবে শঙ্কায়। এর মতো লজ্জা বোধহয় আর একটিও নেই! এখন তাই হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে এমন শিশু নির্যাতনের শিকারের বহু রেকর্ড রয়েছে। মাত্র কদিন আগে ঢাকায় রেপ করে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার এক ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামে ২০১৬ সালে এক বছরের শিশু এই পাশবিকতায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছে। এমন উদাহরণ হাজার হাজার। এমন অনৈতিক অবক্ষয়ের কারণটি পর্যালোচনা করলে অনেক কারণ খুঁজতে হবে। আবার একটু অন্য রকম ভাবলে যে ফলাফল আসে, তা হচ্ছে নিজেদের আশপাশ ও ঘর থেকে এর সৃষ্টি। আমার একটা প্রতিবেশী ছেলেকে, আত্মীয়, কাজের লোক, পড়শিকে দিনের পর দিন কতটা বিশ্বাসের ঘরে তালা দিয়ে রাখতে পারি? এক দিন সে তালার চাবি আপনার বিশ্বাসকে ফাঁকি দিয়ে নিয়ে যাবে। তখন আর করার কিছুই থাকবে না।

এখন নিয়মিতভাবে এ রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কন্যাশিশু মানে একটা ধর্ষকের জন্য বড্ড নিরাপদ ও লালসা মেটানোর সুবিধাজনক পথ। শিশু না বোঝে এসব! না বোঝে এ ব্যাপারে কাউকে বলতে! না বোঝে এ সময়টা কী করা উচিত? কোনো কিছুই তার করার থাকে না। আঘাতটা অনেক শিশু হজম করে। নীরবে তার শৈশবকে বিচিত্রভাবে দেখে। এতে অনেক শিশু নিজেকে সামলে উঠে। বড় হলেও সে ভীতি থেকে যায় আজন্ম! অবাক হলেও সেসব নোংরা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে অকপটে। মিটু তে এসেছে এমন সব ঘটনা। না শেয়ার করেও তো উপায় নেই।

কেননা, এখন যে একেবারে দুধের শিশুটা নিরাপদ না। নিরাপদ না কাছের আত্মীয়স্বজন থেকে। এমতাবস্থা হলে কী উপায়! ভাবছেন? ভাবাই তো উচিত! কোথায় যাব? কী হবে! এভাবে শিশুর ওপর অত্যাচার বাবা-মা কখনোই মেনে নেওয়া দূরে থাক মুখবুজে সহ্যও আর সম্ভব নয়। শত খবরে দেশ চাউর এখন হররোজ! ছিঃ! বলেই তা থেমেও যাচ্ছে। হচ্ছে না বিচার কোনো ধর্ষকের সঠিকভাবে। জেল হলেও কদিন পর ঠিকই বেরিয়ে আসছে বা তার পরবর্তী কী শাস্তি হলো, তা আর জনসম্মুখে আসছে না। এজন্য দিন দিন বেপরোয়া হয়ে পড়েছে ধর্ষক। নিত্যনতুন ধর্ষকের চেহারা দেখা যাচ্ছে। শিশুকে অত্যাচার করেই ক্ষান্ত থাকছে না ধর্ষক! শিশুর জীবননাশ করছে অপকর্ম শেষে।

সম্প্রতি বেশকটি ঘটনা দেশে আলোড়ন তুলেছে। একটা শিশুকে কারো কোলে দিতে মাকে হতে হচ্ছে বিব্রত অনেক পরিবারে। একজন শিক্ষিত মা এসব খবরে বিভ্রান্ত! এসব ঘটনা জেনে দেখে কোনো মা আর কি নিশ্চিন্ত থাকতে পারে? আমরা নিজেরাই শিশুদের ভয়ংকর ক্ষণে ঠেলে দেই নিজেদের অজান্তে। ২০১৮ সালের এক জরিপে, ৩ হাজার ৯১৮ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতিত হয়েছে; যেখানে ৯৪২টিই ধর্ষণকান্ড। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার ১৮২ জন আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৬৩ জনকে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘বিচারহীনতার কারণেই ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের হার এতটা উদ্বেগজনক। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় যে, অপরাধী খুবই ক্ষমতাবান। তাই সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি এসব কারো বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরি।

লেখক : সাংবাদিক, সাহিত্যিক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close