reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

নদী হত্যার বিচার চাই

দেশ যদি মা হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের মাতৃহত্যার দায়ে বিচার হওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গ উত্থাপনের আগে কিছুটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন। মাতৃরূপী বাংলাদেশের জন্মদাত্রীর নাম নদী। আর সে কারণেই এ দেশকে আমরা নদীমাতৃক বলে উল্লেখ করে থাকি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সেই জন্মদাত্রীকে আমরা প্রতিনিয়ত হত্যা করে চলেছি। এ পর্যন্ত কোথাও এর বিচার পাওয়া যায়নি। সবার দৃষ্টি এখন আদালতের দিকে।

একদিকে উজানে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিকে পরিবর্তন করে পানি সরিয়ে নেওয়ার ফলে নদীর ভাটিতে নদীগুলো রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি শুকিয়ে যাওয়া নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে নানা ধরনের স্থাপনা। এর মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটভাটা অন্যতম। এসব ইটভাটার জন্য মাটি সংগ্রহ করতে নদীর কূলে দেওয়া হচ্ছে অস্থায়ী বেড়িবাঁধ। আর এ বেড়িবাঁধের কবলে পড়ে বিপন্ন হচ্ছে নদী।

উজানে পানি প্রত্যাহার, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে রাজবাড়ীতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে প্রমত্তা পদ্মা, একসময়ের খরস্রোতা গড়াই, চন্দনা, হড়াই ও চন্দ্রা। এ পাঁচটি নদী নাব্য হারিয়ে ধূধূ বালুচরে পরিণত হয়েছে। যদিও নদীগুলো বাঁচাতে ড্রেজিং শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ধলেশ্বরীর জীবন নিয়েও একই শঙ্কা বিরাজ করছে। একসময় বর্ষা মৌসুমে ঢেউয়ের গর্জনে ঘরে ঘুমাতে পারত না নদীতীরের মানুষ। কিন্তু এখন তাকে দেখে বর্তমানে কল্পনা করাও কঠিন হয়ে পড়ে যে, একদা এখানে এক বিশাল নদী ছিল। যার প্রমত্তায় মানুকে সদা-সর্বদাই থাকতে হয়েছে আতঙ্কগ্রস্ত।

‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরেÑ এই বাংলায়/হয়তো মানুষ নয়-হয়তোবা শঙ্খচিল শালিশের বেশে’। কবি জীবনানন্দ দাশের অমর কবিতা ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় উঠে আসা নদী, ‘ধানসিঁড়ি’র সেই রূপ-যৌবন আজ আর নেই। কবি বেঁচে থাকলে এবং নদীর বর্তমান ভেঙেপড়া বেহাল অবস্থার দিকে তাকালে কতটা মর্মাহত হতেন, তা আমাদের জানা না থাকলেও এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আজ কোথায় যেন বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে আমরা যেন এগিয়ে চলেছি এক মহাকালের মহাবিপর্যয়ের দিকে। একদিকে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের অনৈতিক আচরণ, পাশাপাশি দেশের মধ্যে বসবাসরত কতিপয় চরম ভোগবাদী মানুষের সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের মাটিকে রক্তাক্ত করেই চলেছে। রক্তক্ষরণ হতে হতে প্রায় প্রতিটি নদীই এখন মরণাপন্ন। একটি কথা স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে, এই রক্তক্ষরণ এক দিন সবার রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। নদী না বাঁচলে কারো জীবনকে নিরাপদ করা সম্ভব নয়। এ কথা স্মরণে রেখেই নদী রক্ষা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আর এ দাবি পূরণ করতে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। সরকার আসবে এবং খুব শক্ত হাতে নদী হত্যাকারীদের দমন করবেÑ এটাই প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close