নিতাই চন্দ্র রায়

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

পর্যালোচনা

ভালোবাসার নান্দনিকতায় ফুল

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি/মোরা একটি শিশুর হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।’ গীতিকার গোবিন্দ হালদার রচিত ও শিল্পী আপেল মাহমুদ সুরাপিত এ গান ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি জাতিকে জুগিয়েছে অসীম প্রেরণা। এখনো গানটি শুনে প্রত্যেক বাঙালির রক্ত-শিরা ও ধমণিতে শিহরণ জাগে। জাগে সব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অসীম সাহস। বাঙালির মানসপটে ভেসে উঠে পলাশ, কৃষ্ণচূড়া ফুলের রক্ত রং। মহান ভাষা আন্দোলনের অগ্নিময় ইতিহাস। ফুল দিয়েই আমরা শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরে আমরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে এ ফুল দিয়েই স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি ভালোবাসার অর্ঘ্য নিবেদন করি।

সম্প্রতি ফুল শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে ইউএসএইড এগ্রিকালচারাল ভ্যালু চেইন (এভিসি) প্রকল্প এবং বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সহযোগিতায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাওয়ার এগজিবিশন অ্যান্ড কনফারেন্স ২০১৮।’ আন্তর্জাতিক ওই পুষ্প প্রদর্শনীতে ৬৮টি স্টল সাজানো হয়েছিল দেশি-বিদেশি ফুলের সমারোহে। সেখানে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ছিল ফুল কেনা ও ফুল দিয়ে নিজেকে সাজানোর সুন্দর ব্যবস্থা। অর্কিড, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ও রজনিগন্ধার পাশাপাশি বিশেষ চাহিদা ছিল লিলি, কারনেশন প্রভৃতি ফুলের। ফুল চাষে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল নিয়ে প্রদর্শনীর পাশের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় একটি সেমিনার। সেমিনার থেকে জানা যায়, ক্ষুদ্র উদ্যাক্তাদের পাশাপাশি দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও ফুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।

শিক্ষার হার, মাথাপিছু বার্ষিক আয় বৃদ্ধি ও দ্রুত নগরায়ণের ফলে মানুষের আচার-আচরণ ও রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের মনমানসিকতার। এ কারণে মানুষের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে ফুল ব্যবহারের প্রবণতা। পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস ছাড়াও বিয়েশাদি, জন্মদিন, বৌভাত, গায়েহলুদ ও সভা-সমাবেশ এমনি হাসপাতালে রোগী দেখতে যাওয়ার সময়ও ফুলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বড় বড় অনুষ্ঠানের মঞ্চ সজ্জায় টাটকা ফুলের ব্যবহারও কম নয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে গাড়ি সাজাতে, গেট সাজাতেও ফুলের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুলের এ ব্যবহার সামনের দিনগুলোতে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন দেশের উদ্যানতত্ত্ববিদরা। বর্তমানে দেশের ২৩টি জেলায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ৫০ জাতের ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে ফুলের বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে প্রধানত ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোহর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, বগুড়া, রংপুর, কুষ্টিয়া, নাটোর, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে বেশি পরিমাণে ফুল উৎপাদিত হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের তথ্যমতে, প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ফুলের বাজার শতকরা ১০ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮ সালে বৈশ্বিক বাজারে ফুলের রফতানি বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ফুল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব ফুল রফতানিতে বাংলাদেশের অবদান তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ফুল রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৮৬ হাজার ডলার। সম্ভাবনাময় এ শিল্পের উন্নয়নে এর সঙ্গে জড়িত কৃষক ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, আধুনিক প্রযুক্তির বিস্তার ও ব্যবহারে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং উন্নত ও নতুন নতুন জাতের বীজ সরবরাহ করা, ওয়্যারহাউজ ও কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ এবং সর্বোপরি অবকাঠামো উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনীয় হিমাগারের অভাবে আমাদের দেশে কৃষি খাতে উৎপাদিত নানাবিধ পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে উদ্যোক্তা ও কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন। ফুল খাতের বিকাশে হিমাগার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। বাংলাদেশে কৃষি খাতের উন্নয়নে ওয়্যারহাউস নির্মাণ অপরিহার্য। তাই ওয়্যারহাউস নির্মাণকে সরকারিভাবে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করা এখন সময়ের দাবি। কারণ উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের শতকরা ২ থেকে ২৫ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। অনেকের মতে, কৃষি খাতের অগ্রগতির লক্ষ্যে বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণে সরকারকেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং তা হলেই দেশের বেসরকারি খাত কৃষি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।

ফুল শুধু মানুষের মনোরঞ্জন, সৌন্দর্য ও ভালোবাসারই প্রতীক নয়; ফুল একটি শিল্প। ফুল একটি লাভজনক কৃষিপণ্য ও বিশ্ব বাণিজ্যের অনুষঙ্গ। এ ফুলকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠেছে বিশাল বাণিজ্য ও শত শত কোটি ডলারের বাজার। নেদারল্যান্ডসের আলসামিরে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ফুলের বাজার অবস্থিত। এটি মূলত নিলামভিত্তিক একটি ফুলের বাজার। প্রায় ৫ লাখ ১৮ হাজার বর্গফুটের এ বাজারে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল আসে। প্রতিদিন দুই কোটিরও বেশি ফুল বিক্রি হয় এই বাজারে। তবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও মা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসের আগে এখানে প্রায় তিন কোটি ফুল বিক্রি হয়ে থাকে। চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ ফুল এই বাজারে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয়। আর বিশ্বের চাহিদার ৪০ শতাংশ ফুল রফতানি করে নেদারল্যান্ডস। প্রতি বছর প্রায় ৩২০ কোটি ডলারের ফুল রফতানি করে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুলের বাজার হংকংয়ের মংকক রোডে অবস্থিত। তবে এ ফুলের বেশির ভাগই স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করা হয়ে থাকে। মূলত চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া এখান থেকে ফুল আমদানি করে থাকে। ফুলের বাজার হিসেবে বিখ্যাত হলো লন্ডনে অবস্থিত কলম্বিয়া রোড। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজারটি ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে রাস্তার দুধারেই ফুল বিক্রি হয়। স্পেন, ইসরায়েল, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে থেকে এখানে ফুল আসে। ফুল বিক্রির চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতায় মানিকঘাট। প্রায় ১২৫ বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে এ বাজারে ফুল বিক্রি করা হচ্ছে। বিশ্ব চাহিদার প্রায় অর্ধেক গাঁদাফুল এ বাজার থেকে সরবরাহ করা হয়। ফুল বিক্রির বাজার হিসেবে পঞ্চম স্থানে ইকুয়েডরের কুয়েন চা বাজার। এ ছাড়া এখানে খোলা রাস্তায় ফুল বিক্রি করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর ইকুয়েডর থেকে যে ৮২ কোটি ডলালের ফুল বিক্রি হয়, তার বেশির ভাগই এ বাজার থেকে সরবরাহ করা হয়।

মানুষের সামাজিক আচার-আচরণ ও শিল্পিত রুচির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে বেড়ে চলেছে ফুলের চাহিদা। আর এ সুযোগকে গ্রহণ করেছে বিশ্বের অনেক দেশ। ফুল রফতানি অনেক উন্নয়নশীল দেশে খুব অল্প সময়ে এগিয়ে গেছে। ২০১৩ সালে বিশ্বে ফুল রফতানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের ১০টি সেরা ফুল রফতানিকারক দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে নেদারর‌্যান্ডস। নেদারল্যান্ডস্ বিশ্বের অন্যতম ফুল রফতানিকারক দেশে হলেও বর্তমানে ইথিওপিয়া, ইকুয়েডর, কেনিয়া ও কলম্বিয়াÑ এ চার দেশ বিশ্বের ৪৪ শতাংশ কর্তিত ফুল রফতানি করছে। কর্তিত ফুলের শতকরা ৫ ভাগ কলম্বিয়া, কেনিয়া শতকরা ১১ ভাগ এবং ইকুয়েডর ও ইথিওপিয়া শতকরা ৯ ভাগ কর্তিত ফুল রফতানি করছে। পশ্চিমবঙ্গ এখন ভারতের অন্যতম ফুল উৎপাদনকারী রাজ্য। ভারতের এক-তৃতীয়াংশ ফুলই উৎপাদিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। আবাদি জমির বাইরেও পতিত জমি, পলি হাউস কিংবা গ্লাসহাউসে সফলভাবে ফুল চাষ করা সম্ভব। এ কারণে উন্নয়নশীল বেশ কয়েকটি দেশ ফুল চাষের প্রতি মনোযোগী হয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।

২০১৩ সালে বিশ্বে ফুল রফতানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। গত বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সামনে রেখে অস্ট্রেলিয়ায় সাড়ে ১০ বিলিয়ন গোলাপ আমদানি করা হয়। এর মধ্যে শুধু কেনিয়া থেকেই প্রায় সাড়ে ছয় লাখ গোলাপ ফুল আমদানি করা হয়। কেনিয়া শুধু গোলাপ রফতানিকারক দেশই নয়, বিশ্বের অন্যতম ফুল রফতানিকারক দেশও বটে। ফুল চাষ থেকে দেশটি বছরে উপার্জন করছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। আর দেশটিতে এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে ফুল চাষের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ৪ থেকে ৭ ধরনের ফুল রফতানি হচ্ছে। এগুলো হলোÑ ১. গ্লাডিওলাস (৭ ধরনের রঙিন ফুল) ২. রজনিগন্ধা (সিঙ্গেল) ৩. রজনিগন্ধা (ডাবল) ৪. গোলাপ (সাদা ও রঙিন) এ ছাড়া আমদানি করা কিছু বিদেশি ফুলও রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে গাঁদা, লিলিয়াম, থাই অর্কিড, থাই ও চায়না গোলাপ, কার্নেশন, জারবেরা ও স্নোবল আমদানি করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অভিজাত মার্কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফুল রফতানির জন্য বাংলাদেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ফুল ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা। বিষয়গুলো হলোÑ ১. বিশ্বের যেসব দেশে ফুলের বড় বড় মার্কেট আছে, সেসব দেশের সঙ্গে রফতানি পণ্য তালিকায় ফুলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ২. বিমানের ভাড়া কমানোসহ কার্গো নিশ্চিত করা এবং কোল্ড ভেসেলে ব্যবস্থা করে রফতানিতে সহায়তা করা। ৩. ঢাকা শহরের প্যাকেজিংও গ্রেডিংয়ের জন্য মার্কেটসংলগ্ন শেল্টার তৈরি করা। ৪. ফুল সতেজ ও তরতাজা রাখা এবং বীজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হিমাগার/ওয়্যারহাউস তৈরি করা। ৫. ফুল উৎপাদন, বাজারজাত ও রফতানি নীতিমালা প্রণয়ন করা। ৬. রফতানিযোগ্য ফুল উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কার্ষক্রম জোরদার করা। ৭. ফুল চাষি, ফুল ব্যবসায়ী ও ডিজাইনারদের পোস্ট হারভেস্ট ম্যানেজমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। ৮. ফ্লোরিকালচার ফাউন্ডেশন বা বোর্ড গঠন করে তার আওতায় সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং ফুল চাষি, ফুল ব্যবসায়ীদের উৎপাদন, বাজারজাত, প্যাকেজিং, মার্কেট চেইন বাস্তবায়নের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান। ৯. রাজধানী ঢাকায় এবং দেশের ফুলের রাজধানী গদখালীতে আধুনিক কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। এ দেশে গ্লাডিওলাস, গোলাপ, রজনিগন্ধা, জারবেরা ও অর্কিড ফুলের উৎপাদন এবং রফতানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপকভাবে এসব ফুলের চাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব হলে ফুল দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে এবং কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যবিমোচনেও এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।

লেখক : সাবেক মহাব্যস্থাপক (কৃষি)

নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস্ লি., নাটোর

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close