reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯

আর কত বিসর্জন

সড়ক যেন আজ এক মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। কথাটা জনারণ্যে বহুল প্রচলিত হলেও পুরোপুরি সত্য নয়। প্রকৃত সত্য হলো, সভ্যতার দাবিদার মানুষরাই সড়ককে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। কোনো জড়ই মানুষের কোনো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কেননা ক্ষতি করার মতো কোনো শক্তি তার থাকে না। মৃত আর জড়দের বসবাস সমান্তরালে। সুতরাং, আমরা বাক্যটিকে পরিবর্তন করে বলতে পারি, মানুষ সড়ককে আজ মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। আবার মানুষ বলতে সমাজের সব মানুষের ওপর এ দায় দেওয়া যাবে না। সমাজের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি অংশই মূলত এ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। আর এই অংশটির নাম গাড়িচালক।

এদের কোনো জবাবদিহি নেই। স্বেচ্ছাচারিতার বিকশিত বৈশিষ্ট্যে এরা বলীয়ান। গত বছর রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি ওঠে। দাবি ওঠে স্বেচ্ছাচারিতার বিকাশমান ধারাকে রুখে দেওয়ার। এর ফলে সড়ক নিরাপত্তায় বেশ কিছু নির্দেশনাও আসে। কিন্তু সে নির্দেশনা কোনো কাজে আসেনি। কমেনি সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৭ হাজার ২২১ জন। প্রাণহানির এ সংখ্যা ২০১৭ সালের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি। যাত্রীকল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৯৭৯। পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ফি বছরই এ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। কোনোভাবেই একে আর থামানো যাচ্ছে না।

পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর জানুয়ারিতে ৪৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫১৪ জন। ফেব্রুয়ারিতে ৪৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৪৫৯। মার্চে ৪৯১টি দুর্ঘটনায় মারা যান ৫০৩ জন। এপ্রিলে দুর্ঘটনা ৪৫১ এবং মৃতের সংখ্যা ৪৭১। মে মাসে দুর্ঘটনা ৪৫৮ এবং মৃত্যু ৪৮৪। জুন মাসে ৫২২ এবং ৬১৫, জুলাইয়ে ৩৭৬ এবং ৪২৫, আগস্টে ৪৯১টি দুর্ঘটনায় মারা যান ৫১৯ জন। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যথাক্রমে ৪২৩ ও ৫১৪, ৩৯৫ ও ৪৯৫, ৪৩২ ও ৪৩৩, ৫৩৭ ও ৫৮৪। অর্থাৎ ২০১৮ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ ৫ হাজার ৫১৪টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ২২১ জন। পাশাপাশি আহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৪৬৬। বিশ্লেষকদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণটি হচ্ছে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং বিপজ্জনক ওভারটেকিং। এ ছাড়াও রয়েছে রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন।

আমরা মনে করি, হত্যাকান্ডের এই মহাযজ্ঞ অচিরেই বন্ধ হওয়াটা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আর এই মহাযজ্ঞের হাতে হাতকড়া পরাতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার যেভাবে জিরো টলারেন্সের কথা ঘোষণা করেছেন, একইভাবে এখানেও সেই ঘোষণা আসতে হবে। নিতে হবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যে সিদ্ধান্ত সরকারকে আরো শক্তিশালী এবং গণমুখী করে তুলবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close