নিতাই চন্দ্র রায়

  ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯

এগ্রো পার্ক

সমন্বিত কৃষি খামার

পাঁচ বন্ধু মিলে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোড়, পোড়াবাড়ি রোডসংলগ্ন চিকনা মনোহর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করছেন একটি ব্যতিক্রমধর্মী সমন্বিত কৃষি খামার। খামারটির নামও দিয়েছেন চমৎকার ‘এগ্রো পার্ক’। গত ১৮, জানুয়ারি এগ্রো পার্কের একজন উদ্যোক্তা; মনোরঞ্জন সরকার আমাকে নিয়ে যান তাদের কৃষি খামারটি দেখাতে। সোয়া একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত খামারটিতে দুটি শেডে রয়েছে ৪ হাজার লেয়ার মুরগি। এসব মুরগি থেকে প্রতিদিন ৩৭০০ থেকে ৩৮০০ ডিম পাওয়া যাচ্ছে। ১০০ ডিম বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা দামে।

উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমানে প্রতিটি ডিম উৎপাদনে তাদের খাদ্য ও ওষুধ বাবদ খরচ হচ্ছে ৩ টাকা। এছাড়া বাচ্চার মূল্য, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিলের খরচও রয়েছে। এসব খরচ যোগ করে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৪ টাকা এবং প্রতিটি ডিমে নিট লাভ হচ্ছে ৩ টাকা। গত বছর যখন ডিমের দাম কমে যায়, প্রতি শ’ ডিম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়, তখন তাদের লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। লোকসান দিয়েও তারা কষ্ট করে খামারটিতে ডিম উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। লেয়ার মুরগি ছাড়াও খামারটিতে রয়েছে ১২টি জার্সি ও হলটেন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু। গরুগুলোর মধ্যে আছে চারটি দুগ্ধবতী ও তিনটি গর্ভবতী গাভী এবং পাঁচটি ষাঁড় ও বকনা বাছুর। বর্তমানে চারটি উন্নত জাতের গাভী থেকে প্রতিদিন ৬০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দামে। এ ছাড়া এ খামারের খালি জায়গায় রোপণ করা হয়েছে ১০০টি থাই-৭ জাতের পেয়ারা। পেয়ারা গাছের কোনোটিতে ফুল ধরেছে। কোনোটিতে এখন ছোট ছোট পেয়ারা ঝুলছে। পেয়ার ছাড়া আরো আছে ডালিম, লেবু, পেঁপে ও মাল্টাসহ নানা রকমের ফলের গাছ। তবে এসব ফল গাছের সংখ্যা খুব বেশি নয়।

অন্যদিকে, খামারটিতে রয়েছে গরুর খাবারের জন্য প্যারা ও নেপিয়ার ঘাসের চাষ। আমি উদ্যোক্তাদের হাইব্রিড জাম্বু জাতের ঘাস চাষের পরামর্শ দেই। খামারটির পাঁচজন উদ্যোক্তা হলেন, মো. খোরশেদুল আলম রাজিব, মনির হোসেন, মনোরঞ্জন সরকার, মো. মাসুম বিল্লাহ ও মো. ইকবাল হোসেন রাজু। আজ থেকে তিন/চার বছর আগে ছাগল পালনের মাধ্যমে খামারটির যাত্রা শুরু হয়ে ছিল। খামারটিতে ব্ল্যাক বেঙ্গল ও যমুনাপারি জাতসহ মোট ১২৫টি ছাগল ছিল। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে পিপিআর রোগে ৫০টি ছাগল মারা যায়। বাকি থাকে ১০০টি ছাগল। ওই ১০০টি ছাগল খুব কম দামে বাজারে বিক্রি করে শুরু করা হয় লেয়ার মুরগি পালন খামার। ছাগলের খামারে তাদের প্রায় ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়। উদ্যোক্তাদের মধ্যে মো. মনির হোসেন সার্বক্ষণিক খামারে অবস্থান করে সব কাজ-কর্ম দেখাশোনা করেন। খামারটিতে দুইজন কর্মচারী সার্বক্ষণিক কাজ করেন।

উদ্যোক্তা মনির হোসেন জানান, বর্তমানে তাদের খামারটি লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিট লাভ হচ্ছে। সমন্বিত কৃষি খামার ‘এগ্রো পার্কে’ এর সফল দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের অন্যান্য এলাকার যুবক-যুবতীরা সমন্বিত কৃষি খামার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুক, দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় অবদান রাখুক।কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যবিমোচনের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হোকÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : পরিচালক, কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close