সঞ্চয়পত্রের ডেটাবেইজ
কালোটাকার দৌরাত্ম্যরোধে তৈরি হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের ডেটাবেইজ। উদ্যোগটি ভালো। তবে সরকার কাগজ বিক্রি করে যে বিপুল পরিমাণ টাকা ঘরে তুলতে পারত, তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সময় সময় বৃহত্তর স্বার্থের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতর স্বার্থকে বলি দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সে রকমটাই হয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস। দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্সে আনার ক্ষেত্রে সরকারের এ উদ্যোগকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।
কোন শ্রেণির ব্যক্তিরা সঞ্চয়পত্র কিনছেন বা কারা সঞ্চয়পত্র বেশি কিনছেন, তা জানতে এই ডেটাবেইজ। ডেটাবেইজ তৈরি হয়ে গেলে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য আয়কর সনদ (ই-টিআইএন) ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাধ্যতামূলক করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঞ্চয়পত্র খাতে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে এবং ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিরোধে এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে শিগগিরই নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে চুক্তি করবে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার একটানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে দুর্নীতি দমনে উদ্যোগ নিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্র খাতকেও দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে নতুন এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। ধারণা করা হয়, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয় করা অর্থের একটা বড় অংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। এ ছাড়া সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে এ সঞ্চয়পত্র। এতে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি সমাজের কোন শ্রেণির ব্যক্তিরা সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ করছেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সঞ্চয় অধিদফতর কোনো গবেষণা করেনি। ফলে সমাজের কোন শ্রেণির মানুষ সঞ্চয়পত্র বেশি কিনছেন, তারও কোনো হিসাব নেই।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) তথ্যমতে, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের একটা বড় অংশ এখানে বিনিয়োগ হওয়ার পেছনে রয়েছে ব্যাপকহারে ধনীদের অংশগ্রহণ। সাধারণ বা স্বল্প আয়ের মানুষের কল্যাণে সঞ্চয়পত্র খাতের উদ্বোধন করা হলেও বাস্তবে ৯০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র কিনেছেন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। ৮৫ শতাংশ সঞ্চয়পত্র মাত্র ১২ শতাংশ লোকের কাছে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ক্রমেই বাড়ছে সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পরিমাণ। আমরা মনে করি, এই উদ্যোগ যেন মাঝপথে থেমে না যায়। অথবা দিক্্ভ্রষ্ট হয়ে অন্যপথে যাত্রা শুরু না করে। আমরা ঘর পোড়া গরু। সিঁদুরে মেঘ দেখলেই আগুনের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠি। আওয়ামী লীগের সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য মেয়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এই আতঙ্ককে প্রশমিত করে মহৎ এই উদ্যোগকে সফলতার দরোজায় পৌঁছে দেবেন।
"