reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯

অবসান হোক বৈষম্যের

অর্থনৈতিক নিষ্পেষণের জাঁতাকলে পড়ে গরিবরা ক্রমেই পাতালের দিকে চলে যাচ্ছে। বিষয়টি কোনোভাবেই মানবজাতির জন্য কল্যাণকর নয়। বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়া যেন আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে গত বছর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৮০ কোটি, যা জনগোষ্ঠীর অর্ধেক। এই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমান সম্পদ শীর্ষস্থানীয় ২৬ ধনীর হাতে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্যগোষ্ঠী অক্সফামের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আমাদের অর্থনীতি এমনভাবে সাজানো, গুটিকয়েক মানুষের সম্পদ ক্রমেই এবং অন্যায্যভাবে বাড়ছে। বিপরীতে কোটি কোটি মানুষ কোনো রকমে জীবনধারণ করছে। নারীরা নিরাপদ মাতৃসেবা পাচ্ছেন না। শিশুরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৭ সালে বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমান সম্পদ ৪৩ জন ধনকুবেরের হাতে ছিল। ২০১৬ সালে এই ধনকুবেরের সংখ্যা ছিল ৬১। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়ের তুলনায় গত দশ বছরে বিশ্বে ধনকুবেরের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতি দুই দিনে একজন করে ধনকুবেরের আবির্ভাব ঘটেছে। পাশাপাশি গত বছর ৩৮০ কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পদ কমেছে ১১ শতাংশ। বিপরীতে বিশ্বের ২ হাজার ২০০ ধনকুবেরের সম্পদ বেড়েছে ৯০ হাজার কোটি ডলার।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী আমাজানের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোসের সম্পদ গত বছর বেড়ে ১১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় সম্পদের পরিমাণ ৯ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই সম্পদের ১ শতাংশ দিয়ে ইথিওপিয়ার মতো দেশের সারা বছরের স্বাস্থ্য বাজেটের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। দেশটির জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫০ লাখ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ধনকুবেররা যদি তাদের সম্পদের ওপর মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ কর বেশি দেন, তাহলে শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া বিশ্বের ২৬ কোটি ২০ লাখ শিশুর জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ঘটিয়ে ৩৩ লাখ মানুষকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু মূল বিষয়টি হচ্ছে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে? সম্ভবত ঘণ্টা বাঁধার মতো কেউ নেই। সেই মাপের মানবিকবোধের উত্তরণ এখনো ঘটেনি। বিশ্বসমাজ এবং সমাজব্যবস্থা ক্রমেই বোধহীন হয়ে পড়ছে। আর এই বোধহীনতা সারা বিশ্বকে একটি করুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত এই বৈষম্য এক দিন মানবসভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। যুদ্ধ হয়ে উঠবে অনিবার্য। আর সেই অনিবার্যতায় পৃথিবী পরিণত হবে এক ধ্বংসস্তূপে, যা কখনোই আমাদের কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, সম্পদের একটি মার্জিত বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে উঠুক এবং পৃথিবীও

ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close