দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৯

প্রত্যাশা

অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক

নতুন বছরের শুরুতেই বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হয়েছে। গত এক বছরে দুই ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের এ স্থানে নিতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৪তম স্থান দখল করবে। প্রায় একই সময়ে ২০৩২ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ঠেলে চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। প্রতিবেশী ভারত পরিণত হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা-প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল ২০১৯ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, একুশ শতক হবে এশীয় শতক। চলতি ২০১৯ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকার শীর্ষ পাঁচে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারত। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম, চীন দ্বিতীয়, জাপান তৃতীয়, জার্মানি চতুর্থ ও ভারত পঞ্চম স্থানে।

বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার অন্য অনেক দেশের মতো আগামী ১৫ বছরে বাংলাদেশে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে। গত এক বছরে বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিলের ৪৩তম স্থান থেকে ৪১তম স্থানে উঠে এসেছে। আগামী ১৫ বছরে বাংলাদেশ ১৯ ধাপ এগিয়ে যাবে। সে হিসাবে ২০২৩ সালে ৩৬তম, ২০২৮ সালে ২৭তম এবং ২০৩৩ সালে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার সামনে রেখে। সেই অর্থে ২০৩২ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি অর্থনীতির একটি হবে কি না, তা প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকা, না থাকার ওপর নির্ভরশীল। তবে আশার কথা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে প্রবৃদ্ধির বর্তমান হার আরো বাড়বেÑ এমনটিই আশা করা যায়। সেটি হলে ২০৩২ সালের আগেই সোনালি অর্জন শীর্ষ ২৫ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি-সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকÑ এ তিনটি সূচকের যেকোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ ডলার। মানব সম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম, যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।

‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে; যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে।

গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’

বাংলাদেশের অর্জন ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের কাছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্রঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারও প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধবিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির ৪৭ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যু হার কমানো এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তার মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার এবং জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close