reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ জানুয়ারি, ২০১৯

বিদেশি চ্যানেল ও আমাদের শিশু

শিশুদের চারপাশে এখন অপসংস্কৃতির জাল। বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলো শিশুদের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলতে সাহায্য করছে। কার্টুন চ্যানেল আর স্টার জলসার মতো চ্যানেলগুলো অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে ভূমিকা রাখছে। পড়ার টেবিলে যাওয়ার সময় খেয়ে ফেলছে এই বিদেশি চ্যানেলগুলো। অনেক মা স্টার জলসার প্রোগ্রাম দেখার জন্য পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি করছেন। অনেক ক্ষেত্রে মা-শিশুর অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত গড়াচ্ছে! সংসারে ফাটল সৃষ্টি করছে।

শিশুদের ভেতরকার কল্পনাশক্তির ভিত্তিটা তৈরি হয় ছোটবেলাতেই। আশপাশের পরিবেশ, সাংস্কৃতির পরিচর্যা আর চিন্তা-চেতনার বিকাশের মাধ্যমে শিশুরা যা কল্পনা করে, তারই বাস্তবরূপ দেখতে চায়। প্রিয় কার্টুন বা অন্য প্রিয় চরিত্র নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে চায় শিশুরা। ফলে বিদেশি ভাষায় চরিত্রগুলোর মতো সে ভাষায় কথা বলতে চায়। এ ক্ষেত্রে হিন্দি ভাষার প্রভাব বেশি। সঙ্গে সঙ্গে সে ভাষার সংস্কৃতিকে ধারণ করতে চায়। এভাবে চলতে থাকলে মাতৃভাষা যেমন সংকটে পড়বে, তেমনি হুমকির মুখে পড়বে। বাংলা ভাষা ক্রমেই বিকাশশীল থাকবে না। বিকৃতিশীল হতে থাকবে, যা এখন অনেকটা শুরুই হয়ে গেছে। অনেক শিশুই এখন হিন্দিতে কথা বলতে দেখা যায়। দেখা যায়, গ্রামের তুলনায় শহরের শিশুদের মধ্যে ভিনদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির আগ্রাসন ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে। গ্রামের অবস্থাও তাই। দেশীয়-সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে অনেক শিশু। সবচেয়ে ভাবার বিষয়, এসব চ্যানেলে দেখানো সিরিজগুলো শুরু হলে শেষই হতে চায় না! চলতে থাকে লাগাতার। কখন শেষ হবে কর্তৃপক্ষও জানে না! ভারতেও বিদেশি কার্টুন চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। সচেতন মানুষগুলো স্টার জলসার মতো চ্যানেলগুলো সংস্কারের পক্ষে।

বেনটেন, টম অ্যান্ড জেরি, ¯পাইডারম্যান, সিনড্রেলা, ডরিমন ইত্যাদি চ্যানেলগুলো বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি শিশুদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে! অত্যন্ত সুকৌশলে শিশুখাদ্য ও পণ্যে চ্যানেলে দেখানো শিশুদের প্রিয় চরিত্রগুলোর ছবি ব্র্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছে, অনেক শিশুর পোশাক কার্টুন-বিদেশি চ্যানেলে শিশুদের প্রিয় চরিত্রের নামে নামকরণ হচ্ছে। এতে বিক্রির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসাসফল হচ্ছে এবং আরো নতুন নতুন পণ্য বের করছে একই কৌশল প্রয়োগ করে। এক ডরিমনের ছবি দিয়েই অনেক শিশুপণ্য হটকেক হচ্ছে।

এটা হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের দেশে শিশু উপযোগী ভালো অনুষ্ঠান তৈরি করতে না পারা বা শিশু উপযোগী অনুষ্ঠানের অপ্রতুলতা। শিশুনাটক খুব বেশি তৈরি না হওয়া বা মানসম্মত না হওয়া। ভালো অনুষ্ঠানের অভাবই শিশুদের বিদেশি চ্যানেলগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমাদের একটি সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কিছু কিছু বিদেশি চ্যানেল সরকারিভাবে বন্ধ করতে হবে। সিসিমপুর বা ঠাকুরমার ঝুলি ইত্যাদি নাম বেশ জনপ্রিয়। এগুলো নিয়ে ভালো অনুষ্ঠানমালা তৈরি করতে হবে। শুক্রবার বা স্কুল ছুটির দিনে এসব অনুষ্ঠানমালা প্রচার করতে হবে। বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবেÑ এটাই জাতির প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close