সাঈদ চৌধুরী

  ০৫ জানুয়ারি, ২০১৯

পরিবেশ

ইটভাটা আইনের প্রয়োগ ও অস্পষ্টতা

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। প্রতিদিনই নতুন নতুন অবকাঠামোর কাজ শুরু হচ্ছে। প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে দেখা যায়, বিশেষ করে শহরগুলোতে বড় বড় ইমারত গড়ে তোলা হচ্ছে, তার প্রধানতম উপাদান হচ্ছে ইট। স্বীকার করার কোনো বিকল্প নেই যে, কেন ইট আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হয়ে উঠছে দিন দিনই। আধুনিকতার যুগে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ইটের বিবিধ ব্যবহার বেড়েই চলবে। কিন্তু ইট উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব একটি বড় বাধা। বিশেষ করে কৃষিজমি এবং কাঠের ব্যবহার ও তার ফলে উৎপাদিত কালো ধোঁয়া সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। ইটভাটা স্থাপনে এ জন্য ২০১৩ সালের একটি যথেষ্ট শক্ত আইনও রয়েছে। তাতে স্পষ্ট করে যে শর্তগুলো দেওয়া আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষিজমি, বনভূমি, রাস্তার পাশে এবং বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু তাতে কি আসলে কাজ হচ্ছে? ইটভাটা নিয়ে প্রায়ই প্রতিবেদন হচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এবং জরিমানাও করা হচ্ছে, কিন্তু কিছুদিন পর আবার সদর্পে চলছে ইটভাটাগুলো। তারপর আর তদারকিও নেই, জানাও নেই এবং সেই দূষণ আবার শুরু হচ্ছে!

এভাবে চলতে পারে না। একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া কোনোভাবেই ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। কারণ আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে ইট প্রয়োজন হবেই এবং যারা ইট তৈরি করছে, তারা যেকোনোভাবে ইটভাটা চালাতে চাইবেই। ইটভাটা আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে ‘আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা’ অর্থ এমন কোনো ইটভাটা, যা জ্বালানি সাশ্রয়ী যেমন হাইব্রিড হফম্যান কিলন, জিগজ্যাক কিলন, ভার্টিক্যাল স্যাফট ব্রিক কিলন বা টানেল কিলন বা অনুরূপ কোনো ভাটা স্থাপন।

কিন্তু বড় ধরনের প্রশ্ন থেকে যায় এই পদ্ধতি ইটভাটা তৈরি করতে অনেক খরচের প্রয়োজন হয় এই অর্থায়ন করবে কারা। ইটভাটা কর্তৃপক্ষ এত টাকা লগ্নি করে ইটভাটা না চালিয়ে তখন তারা দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। এতে করে একদিকে দুর্নীতি বাড়ছে, ইটভাটাও বাড়ছে অবৈধভাবে এবং কিছু টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কেউ কেউ। এ বিষয়ে এখনই একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। ইটভাটাগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতেই হবে

আমাদের পরিবেশ বাঁচানোর জন্য।

এ জন্য এ রকম হতে পারে সরকার একটি পদ্ধতি নির্ধারণ করে প্রতিটি ইটভাটাকে নির্দিষ্ট ঋণদানের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেবে। তা ছাড়া যদি এমন করা যায়, যারা ইটের বড় বড় ক্রেতা তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জামানত হিসেবে দিয়ে ইট ক্রয়ের চুক্তি করে তারপর ইট নেওয়া শুরু করল এবং ইটভাটাগুলো সে টাকা থেকে তাদের প্রসেসের উন্নয়ন ঘটাল। এতে করে যারা ক্রেতা তারাও সঠিক ইট বাছাই করে কিনতে পারবে এবং ইটভাটাগুলোও উন্নত প্রযুক্তির হতে শুরু করবে।

সাধারণ মানের ইট উৎপাদন বন্ধে বড় বড় ইমারতের ইটগুলো পরীক্ষা করে সেগুলো যদি মান উন্নয়ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয় তবে তাদের জরিমানার বিধান করা

যেতে পারে এতে করে মানহীন ইট উৎপাদন কমে যেতে পারে অনেকাংশে।

ইটভাটাও প্রয়োজন তার সঙ্গে প্রয়োজন পরিবেশ বাঁচানো। সুতরাং সঠিক নিয়মের চর্চা এখানে বাড়াতে হবেই। যে প্রক্রিয়ায় অল্প খরচে পরিবেশ সম্মতভাবে ইট তৈরি করা যায় সে রকম পরিকল্পনা নিয়ে ইটভাটাগুলো স্থাপনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আশা করি, পরিবেশ অধিদফতরসহ সবাই পরিবেশবিষয়ক সঠিক চিন্তার নিমিত্তে ও কাঠামোগত উন্নয়নের স্বার্থে পরিকল্পিত ইট উৎপাদন ব্যবস্থা বিনির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।

লেখক : কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close