reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮

ব্যাংক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ

বিশ্লেষকরা বলেছেন, ব্যাংকিং খাত চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক ছাড়। আর এই ছাড়, খেলাপি ঋণের পরিমাণকে ক্রমাগত নিয়ে চলেছে বিপৎসীমার দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংকিং খাতে বড় বড় গ্রাহককে ছাড় দেওয়ার হিড়িক পড়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগ পর্যন্ত একপক্ষ বিশেষ ছাড়ের আওতায় খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছে। আরেক পক্ষ খেলাপি ঋণ নবায়নের প্রশ্নে নতুন করে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। কৃষি খাতের বড় খেলাপিদের ছাড় দেওয়ার প্রক্রিয়াও ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিষয়টি রাষ্ট্র এবং নাগরিকদের জন্য একটি মহাবিপদসংকেত।

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতের ওপর দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নেতিবাচক প্রভাবের মাত্রা ক্রমান্নয়ে বেড়েই চলেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাত্রাও বেড়ে চলেছে চক্রবৃদ্ধি হারে। বেড়ে যাচ্ছে বাণিজ্য ব্যয়। কমে যাচ্ছে ব্যাংকের আয়। দুর্বল হচ্ছে ব্যাংকসমূহের ভিত্তি। ক্ষেত্রবিশেষ কোনো জমা ছাড়াই কিস্তির এক শতাংশ অর্থ নিয়ে ঋণ নবায়ন করা হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় এক লাখ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের সাড়ে ১১ শতাংশ। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই হার নামাতে হবে ৯ শতাংশে। এ হিসাবে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। আর এটা কমাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তোড়জোড়।

চলতি বছরের ব্যাংকিং কার্যদিবস আছে আর মাত্র পাঁচটি দিন। ব্যাংকগুলোকে এই পাঁচ দিনের মধ্যেই তাদের কর্ম শেষ করতে হবে। তবে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের হিসাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় পাবে। অতিরিক্ত এ সময় দেওয়া হচ্ছে বোনাস হিসেবে। তবে নবায়নটি খাতা-কলমে দেখাতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনো সময়। এই উদ্যোগ খেলাপিদের জন্য একটি সু-সংবাদ বহন করলেও সাধারণ মানুষের জন্য তা সু-সংবাদ নয় বলেই সাধারণের ধারণা। আর এই সু-সংবাদের পিঠে সাওয়ার হয়ে খেলাপিরা ছুটছেন বিদ্যুৎ গতিতে। ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ নবায়নের আবেদন জমার হিড়িক পড়েছে।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা থাকায় ব্যাংগুলো বাধ্য হয়ে এই হার কমাতে ঋণ নবায়ন করবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছ থেকে যা আদায় করা যায়, তাই নিয়ে নবায়ন করে দেবে। এখানে না বললেই নয়, তেলে মাথায় তেল দেওয়াটাই যখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ কাজ করতেই পারেন। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে বলা হয়, বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে পারবে। এই নির্দেশনার আলোকে ব্যাংকগুলো এখন তাদের খেলাপি ঋণ নবায়ন করছে। আমরা মনে করি, ব্যাংকের আমানত যদি সাধারণ মানুষের টাকায় গড়ে ওঠে, তাহলে এ ধরনের সিদ্ধান্তকে নেতিবাচক না বলে আর কোনো পথ থাকে না। আমরা সাধারণ মানুষের পক্ষে এর একটি ইতিবাচক সমাধান চাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close